C-07, 6th floor, Annex Bar Building, Cox's Bazar Court, Bangladesh.

shipta@LegalHome.Org

আইনজীবী হতে চাইলে

বর্তমান সময়ে আইনজীবী বা অ্যাডভোকেট সমাজের একটি সম্মানজনক পেশা। কিভাবে আইনজীবী হওয়া যায় তা নিয়ে অনেকের মনে আছে নানান প্রশ্ন। আজকে বিস্তারিত লিখবো আইনজীবী হতে চাইলে আপনার কি কি বিষয়ে জানতে হবে তার আদ্যেপান্ত।

প্রাথমিক শর্ত

বাংলাদেশে আইনজীবী হওয়ার প্রথম ও প্রাথমিক শর্ত প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং ২১ বছর বয়স পূর্ণ করতে হবে। এই দুটি পূর্ণ হলে এবার শুরু আপনার দ্বিতীয় ধাপ।

আইন নিয়ে পড়তে হলে কি করতে হবে

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল রুলস এন্ড অর্ডার অনুযায়ী একজন আইনজীবী হতে হলে বাংলাদেশ সীমার মধ্যে অবস্থিত কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে অথবা বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত বাংলাদেশের বাইরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ে ডিগ্রি থাকতে হবে যা পরবর্তীতে সমমান সার্টিফিকেট দিয়ে যাচাই করে নিতে হবে। যদি ব্যারিস্টার অ্যাট ল হয়ে থাকেন তাহলে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দিতে যোগ্য।

উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত দুই ধরণের আইন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। প্রথম এইস.এস.সি বা সমমান পাশের পর সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর মেয়াদী এলএল.বি(অনার্স) এবং অন্যকোন বিষয়ে ডিগ্রি বা স্নাতক পাশের পর বিভিন্ন ল কলেজ থেকে দুই বছর মেয়াদী এলএল.বি ডিগ্রি। বর্তমানে এই দুই উপায়ে আইন শাস্ত্রে শিক্ষা অর্জন করা যায়।

আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা

আইন বিষয়ে উপরে উল্লিখিত যেকোন একটি ডিগ্রি নেওয়ার পরে ও উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ হলে যে কেউ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পিউপিলেজ রেজিষ্ট্রেশন বা শিক্ষানবিশ আইনজীবী ফরম পূরণ করে জমা দিতে পারবেন। আইনজীবী হওয়ার প্রথম প্রক্রিয়া হলো এই ফার্স্ট ইন্টিমেশন বার কাউন্সিলে জমা প্রদান।

মনে রাখা আবশ্যক যে, আবেদনকারীর জন্মের সনদের সন্তোষজনক সাক্ষ্যপ্রমাণ, অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী আইন বিষয়ে যোগ্যতার সন্তোষজনক সাক্ষ্যপ্রমাণ, আবেদনকারীর চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কে ভালো অবস্থানরত দুজন ব্যক্তির প্রশংসাপত্র, ফরমে উল্লিখিত তথ্য সত্য ও নির্ভুল মর্মে একটি এফিডেফিট ও ছয় মাস শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করবেন এ মর্মে এমন একজন সিনিয়রের সঙ্গে (যার কমপক্ষে ১০ বছর নিয়মিত ওকালতি করার অভিজ্ঞতা আছে) একটি চুক্তি করতে হবে। আর থাকবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুকূলে নির্ধারিত ফির ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার প্রেরণের রসিদ।

আইন বিষয়ে স্নাতক বা অন্য কোনো ডিগ্রিপ্রাপ্তির পরীক্ষা প্রদানের পরপরই অনতিবিলম্বে উল্লিখিত চুক্তিপত্র, এফিডেভিট ও ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার প্রেরণের রসিদ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সেক্রেটারি বরাবর পাঠিয়ে দিতে হবে।

পিউপিলেজ বা ফার্স্ট ইন্টিমেশন ফর্ম পূরণ কাজ হয়ে গেলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তা জমা দিলে তারা এক কপি রিসিভ কপি যাতে সীল, স্বাক্ষর ও তারিখসহ দিবে এবং সে কপি পাওয়ার পর থেকে আপনার দায়িত্ব হলো আপনার সিনিয়র এডভোকেট যার সাথে চুক্তি করেছেন তার চেম্বারে ধারাবাহিক ছয় মাস শিক্ষানবিশকাল অতিক্রম করা। বাস্তবিকভাবে আদালতের কার্যক্রম শেখা।

অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তি পরীক্ষার ধাপসমূহ

আপনার পাঠানো পিউপিলেজ রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম বার কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত হওয়ার দিন থেকে ছয় মাস পূর্ণ হলে বার কাউন্সিল আপনার বরাবর একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করবে। যেখানে একটা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া থাকে।

সচরাচর বার কাউন্সিল নিজেদের নানানবিধ ব্যস্ততার কারণে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ডাকযোগে পাঠায় না, প্রার্থীকে সরাসরি বার কাউন্সিল অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটি সংগ্রহ করতে হয়। রেজিষ্ট্রেশন কার্ড পেয়ে গেলে আপনি আসন্ন আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা দিতে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত।

ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পার অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির পরবর্তী তিনধাপের পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে আপনাকে ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবারো অনেক কাগজ সংযুক্তি সাপেক্ষে আবেদনপত্র প্রেরণের জন্য জানানো হবে যাকে আমরা সেকেন্ড ইন্টিমেশন বা এপ্লিকেশন ফর এনরোলমেন্ট এজ এ অ্যাডভোকেট বলে থাকি।

বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুকূলে পরীক্ষার নির্ধারিত ফি বাবদ টাকা ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ব্যাংকে বার কাউন্সিলের অ্যাকাউন্টে নগদ জমা দেওয়ার রসিদ। সিনিয়রের কাছ থেকে শিক্ষানবিশকাল সফলভাবে সমাপ্তির প্রত্যয়নপত্র।

শিক্ষানবীশকালে প্রাপ্ত মামলার পূর্ণ বিবরণসহ পরীক্ষার্থী ও সিনিয়রের স্বাক্ষর, সিলমোহর ও তারিখযুক্ত পাঁচটি দেওয়ানি ও পাঁচটি ফৌজদারি মামলার তালিকা, যার শুনানিকালে প্রার্থী নিজে তাঁর সিনিয়রের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এসবের সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ, চারিত্রিক সনদ ও ছবিসহ আরো নানান চাহিদাকৃত কাগজপত্র দিয়ে বার কাউন্সিলে স্বশরীরে জমা প্রদান করতে হবে। সেকেন্ড ইন্টিমেশন জমা দেওয়ার পর আপনার বরাবরে এডমিট কার্ড ইস্যু করা হবে।

অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির পরীক্ষা পদ্ধতি

এডমিট কার্ড পাওয়ার পর প্রার্থীদের প্রথমে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নাম্বারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে যার পাশ নাম্বার ৫০। এম.সি.কিউ পরীক্ষায় পাশ করলে প্রার্থীকে ১০০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষায় বসতে হবে, এই পরীক্ষার পাস নাম্বারও ৫০।

লিখিত পরীক্ষায়ও পাশ করলে শেষ ধাপে ৫০ নাম্বারের মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থীকে ডাকা হবে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা এই মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্ন করে থাকেন।

মৌখিক পরীক্ষায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর অধীনে প্রার্থী যে বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তা থেকেই প্রশ্ন করা হয়। সন্তুষ্টজনক উত্তর দিতে পারলে একজন প্রার্থীকে অ্যাডভোকেট হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে সনদ প্রদান করা হয়।

প্রাথমিক বা এম.সি.কিউ পরীক্ষার বিষয় ও পূর্ণমান

মোট সাতটি বিষয়ের ওপর প্রাথমিক এম.সি.কিউ ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক বা এম.সি.কিউ  পরীক্ষায় দেওয়ানী কার্যবিধি থেকে ২০, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে ১০, ফৌজাদারী কার্যবিধি থেকে ২০, দন্ডবিধি থেকে ২০, সাক্ষ্য আইন থেকে ১৫, তামাদি আইন থেকে ১০, পেশাগত আচরণ, বার কাউন্সিল রুলস এবং লিগ্যাল ডিসিশন থেকে ৫ পূর্ণমানের প্রশ্ন করা হয়। সর্বমোট ১০০ নাম্বারের এম.সি.কিউ যার উত্তর প্রদান করতে হবে ১ ঘন্টা সময়ের মধ্যে।

লিখিত পরীক্ষার বিষয় ও পূর্ণমান

অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় মোট ছয়টি গ্রুপ করে প্রশ্ন করা হবে। “ক” গ্রুপে দেওয়ানী কার্যবিধি ও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে তিনটি প্রশ্ন থাকবে যার মধ্যে দুইটির উত্তর দিতে হবে। এখানে প্রতি প্রশ্নের নাম্বার ১৫। “খ” বিভাগে ফৌজদারী কার্যবিধি থেকে দুইটি প্রশ্ন দেওয়া থাকে এবং একটির উত্তর দিতে হবে। এখানে পূর্ণমান ১৫।

“গ” বিভাগে দন্ডবিধি থেকে দুইটি প্রশ্ন যার মধ্যে একটির উত্তর দিতে হবে ও পূর্ণমান ১৫। “ঘ” ও “ঙ” বিভাগে যথাক্রমে সাক্ষ্য আইন ও তামাদি আইন থেকে পূর্বের মতো একইভাবে দুইটি করে মোট চারটি প্রশ্ন থাকবে এবং দুইটির উত্তর দিতে হবে।

যার পূর্ণমান ১৫ করে। সর্বশেষ “চ” বিভাগে পেশাগত আচরণ, বার কাউন্সিল রুলস এবং লিগ্যাল ডিসিশন থেকে দুইটি প্রশ্ন করা হবে, উত্তর দিতে হবে একটির যার পূর্ণমান ১০। সর্বমোট ১০০ নাম্বারের উত্তর প্রদান করতে হবে।

আইন পেশা পরিচালনা ও অ্যাডভোকেট

এম.সি.কিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনি একজন অ্যাডভোকেট ও কেবলমাত্র নিম্ন আদালতে আইন পেশা পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করলেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে অ্যাডভোকেট হিসেবে সদন অর্জনের পর আপনার কাঙ্কিত বার এসোসিয়েশনে সদস্য পদ গ্রহণ করে আপনি আপনার আইন পেশা পরিচালনা করতে পারেন।

হাইকোর্টের উকিল হওয়ার যোগ্যতা

যদি আপনি হাইকোর্ট বিভাগে আইন পেশা পরিচালনা করতে চান সেক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে দুই বছর আইনজীবী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এবং তখনি হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে সনদ নেওয়ার যোগ্যতা হবে।

এই যোগ্যতা অর্জন হলে হাইকোর্টে ১০ বছরের বেশি প্র্যাকটিস করছেন এমন একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে শিক্ষানবিশ চুক্তি করতে হয়। সিনিয়র অ্যাডভোকেটের অধীনে আপনাকে এক বছর প্র্যাকটিস করতে হবে। একবছর শেষ হলে আবারো বার কাউন্সিলে হাইকোর্টে তালিকাভুক্তির পরীক্ষা দিয়ে এনরোল হতে হবে।

আপিল বিভাগে প্র্যাকটিস

একজন আইনজীবীর হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিসের বয়স পাঁচ বছর হলে এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরা যদি তাঁকে এই মর্মে স্বীকৃতি দেন যে তিনি আপিল বিভাগে আইন পেশা পরিচালনা করার জন্য সঠিক ও উপযুক্ত ব্যক্তি, তবে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন সাপেক্ষে এনরোলমেন্ট কমিটি তাঁকে আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনার সুযোগ দিয়ে থাকে।

তবে কাউকে বিশেষভাবে উপযুক্ত মনে করলে এ আনুষ্ঠানিকতা পালন ছাড়াও প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা তাঁকে আপিল বিভাগে প্র্যাকটিসের অনুমতি দিতে পারেন।

More from the blog

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী হিসেবে আদালত প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট নয়।...

কিভাবে ফৌজদারী মামলার বিচার হয়?

ফৌজদারী শব্দটি একটি ফারসি শব্দ। মূলত ফৌজ হলো আরবি শব্দ আর দারী শব্দটি ফারসি। ফৌজদারী মামলা বলতে বুঝায় যেসব কাজ করা বা না করা...

ফৌজদারী আদালতের গঠন ও বিচারিক ক্ষমতা

ফৌজদারী আদালত বলতে যে আদালতে মানবসৃষ্ট অপরাধের বিচার হয় তাকে বুঝায়। আমাদের ফৌজদারী আইনের গঠনপ্রণালী অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধকে অনেকভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং অপরাধের...

তামাদি আইনের ২৮ ধারা, বিলুপ্ত হবে সম্পত্তির অধিকার

আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ১২ বছর দখলে থাকলেই সম্পত্তিতে অধিকার সৃষ্টি হয়। তামাদি আইনের ২৮ ধারা মতে এডভার্স পজেশনের মাধ্যমে এই অধিকার বিলুপ্ত হয়।...

You cannot copy content of this page