C-07, 6th floor, Annex Bar Building, Cox's Bazar Court, Bangladesh.

shipta@LegalHome.Org

ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে

পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট বর্তমান সময়ে খুবই জরুরী একটি জিনিস। পাসপোর্ট করতে কখনো দালালের শরনাপন্ন হবেন না কারণ বর্তমানে ডিজিটাল পাসপোর্টে দালালের কিছু করার নেই। তাই নিজের পাসপোর্ট নিজে করতে আজকের গাইডলাইনটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট কি?

পাসপোর্ট হলো একটি সরকারি আন্তর্জাতিক মহলে জাতীয় পরিচয়বহনকারী সনদ। এক কথায় দেশের বাইরে যেতে এই সরকারি বইটির প্রয়োজন পড়ে। সময়ের পরিক্রমায় পাসপোর্টের বহু পরিবর্তন হয়েছে। অনেক আগে শুরুর সময়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিলো সম্পূর্ণ এনালগ। সাধারণ প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট দিয়ে তাতে সাধা-কালো ছবি লাগিয়ে সিল দিয়ে দেওয়া হতো। এর পরে এসেছে এম.আর.পি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট্ যা আধুনিক প্রযুক্তির প্রথম প্রজন্মের পাসপোর্ট। সম্প্রতি বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে নতুন ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তি চালু করেছে। ই-পাসপোর্টে বহুরকম সুবিধা রয়েছে।

এম.আর.পি থেকে ই-পাসপোর্ট আবেদন বা নবায়ন

বর্তমানে যাদের এম আর পি পাসপোর্ট আছে সেক্ষেত্রে যারা এম.আর.পি থেকে ই পাসপোর্ট করতে চান অতবা একদম নতুনভাবে ই-পাসপোর্ট করতে চান উভয়ক্ষেত্রে আবেদনের নিয়ম একই। আপনার যদি একটি এম.আর.পি পাসপোর্ট থাকলে শুধু এর ডাটা গুলো ভুল না করে সঠিক ভাবে নতুন আবেদনে উল্লেখ করুন।

ই-পাসপোর্ট আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিজের সংগ্রহে রাখুন। নাহয় পরবর্তী ধাপে যখন হার্ডকপি জমা দিতে হবে কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকলে বিডম্বনা পোহাতে হতে পারে।

 পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা নিচে আলোচনা করা হলো:

১। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে।

২। ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না।

৩। ই-পাসপোর্ট ফরমে কোন ছবি সংযোজন এবং তা সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।

৪। জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে।

৫। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারি যার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাই, তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

৬। জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ নম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে-

(ক) ১৮ বছরের নিম্নে হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ।
(খ) ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ
(গ) ২০ বছরের উর্ধে হলে জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক । তবে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ গ্রহণযোগ্য হবে।

৭। তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরগুলো অবশ্যই পূরণীয়।

৮। দত্তক/অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সাথে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত আদেশ দাখিল করতে হবে।

৯। আবেদন বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে দাখিল করতে হবে।

১০। ১৮ বছরের নিম্নের এবং ৬৫ বছরের ‍উর্ধ্বে সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ০৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।

১১। প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।

১২। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও (GO)/এনওসি (NOC)/ প্রত্যয়নপত্র/ অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (PRL Order)/ পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ Website এ আপলোড থাকতে হবে।

১৩। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।

১৪। দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি এর উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট (VAT) সহ অন্যান্য চার্জ (যদি থাকে) অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হবে। বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রদেয় হবে।

১৫। কূটনৈতিক পাসপোর্টের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার উইং (Consular and Welfare Wing) অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।

১৬। বৈদেশিক মিশন হতে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার কলামে বাংলাদেশের যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।

১৭। অতি জরুরী পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে (নতুন ইস্যু) নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ পূর্বক আবশ্যিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।

১৮। (ক) দেশের অভ্যন্তরে অতি জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ২ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

(খ) দেশের অভ্যন্তরে জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
(গ) দেশের অভ্যন্তরে রেগুলার পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

১৯। আবেদনের সময় মূল জাতীয় ‍পরিচয়পত্র (NID), অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (BRC) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ (GO)/অনাপত্তি (NOC) প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।

২০। পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট প্রদশন করতে হবে।

২১। হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।

২২। ০৬ বছর বয়সের নিম্নের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের ( ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড ) ছবি দাখিল করতে হবে।

২৩। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জানাতে হবে। নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি, জিডি কপিসহ আবেদন দাখিল করতে হবে ।

তথ্য সূত্র: বহিরাগমন শাখা ১ , সুরক্ষা সেবা বিভাগ , স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়স্মারক নং ৫৮.০০.০০০০.০৪০.০১.০০৩.১৬-১২৩৪

একটি ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে উপরিউক্ত কাগজপত্র লাগে। যে দিন এপয়েন্টমেন্ট তারিখে আপনি পাসপোর্ট অফিসে যাবেন সেই দিন এই সকল কপির মুল সেটটি অবশ্যই সাথে রাখবেন। যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ সরাসরি মূল কপি চাইবে।

নাম লেখার বিষয়ে সর্তকতা

নাম লেখার ব্যপারে অনেকেই একটা সাধারণ সমস্যায় ভুগেন যেমন কারো নাম যদি হয় A.Z.M. NASIR RAHMAN হয় তবে তিনি Sure Name এর ক্ষেত্রে লিখবেন RAHMAN. আর Given Name এ লিখবেন AZM NASIR  এখানে কোন ডট বা ফোটা ব্যবহার করা যাবেনা।

আর মনে রাখবেন আপনার সার্টিফিকেটে আপনার নাম যেভাবেই লিখা থাকুক তাতে কিছুই আসে যায়না। আপনি আপনার আবেদনে নাম লিখবেন আপনার এন.আই.ডি অনুযায়ী।

 পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে

ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংকে পাসপোর্ট ফিস জমা দেওয়া যায়। সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে এ-চালানের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যাবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে (১৫% ভ্যাট সহ):

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ১৫ কর্মদিবস /২১ দিনের মধ্যে নিয়মিত বিতরণ: ৪,০২৫ টাকা।

২. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ৭ কর্মদিবস / ১০ দিনের মধ্যে জরুরী বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা।

৩. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ২ কর্মদিবসের মধ্যে অতীব জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা।

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ১৫ কর্মদিবস /২১ দিনের মধ্যে নিয়মিত বিতরণ: ৫,৭৫০ টাকা।

২. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ৭ কর্মদিবস / ১০ দিনের মধ্যে  জরুরী বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা।

৩. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ২ কর্মদিবসের মধ্যে অতীব জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা।

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ১৫ কর্মদিবস /২১ দিনের মধ্যে নিয়মিত বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা।

২. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ৭ কর্মদিবস / ১০ দিনের মধ্যে জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা।

৩. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ২ কর্মদিবসের মধ্যে অতীব জরুরী বিতরণ: ১২,০৭৫ টাকা।

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ১৫ কর্মদিবস /২১ দিনের মধ্যে নিয়মিত বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা।

২. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ৭ কর্মদিবস / ১০ দিনের মধ্যে জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা।

৩. বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ হতে ২ কর্মদিবসের মধ্যে অতীব জরুরী বিতরণ: ১৩,৮০০ টাকা।

বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে (সাধারণ আবেদনকারী)

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ১০০ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ১৫০  মার্কিন ডলার।

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ১২৫ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ১৭৫ মার্কিন ডলার।

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ১৫০ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ২০০ মার্কিন ডলার।

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ১৭৫ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ২২৫ মার্কিন ডলার।

বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে (শ্রমিক ও ছাত্র)

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ৩০ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ৪৫  মার্কিন ডলার।

৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ৫০ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ৭৫ মার্কিন ডলার।

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ১৫০ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ২০০ মার্কিন ডলার।

৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট:

১. নিয়মিত বিতরণ: ১৭৫ মার্কিন ডলার।

২. জরুরী বিতরণ: ২২৫ মার্কিন ডলার।

বি:দ্র: যাদের এনওসি /অবসর সনদ (সরকারি চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে) রয়েছে তারা নিয়মিত ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে জরুরী সুবিধা পাবেন।

 পাসপোর্ট ফরম পূরণ

ধাপ ০১.

প্রথমেই একটি বৈধ ই মেইল আইডি থেকে epassport.gov.bd এই ঠিকানায় গিয়ে নির্দেশনা মোতাবেক আপনার একটি একাউন্ট খুলুন। একাউন্ট খুলতে আপনার নিজের সচল বৈধ মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করুন যা সব সময় আপনার নিজের কাছে থাকবে। একাউন্টের পাসওয়ার্ড যত্নসহকারে সংরক্ষণ করুন।

ধাপ ০২.

আপনার একটি একাউন্ট থেকেই আপনি আপনার নিজের ও আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন।

পাসপোর্ট ওয়েবসাইট
পাসপোর্ট ওয়েবসাইট

ধাপ ০৩.

একাউন্ট হয়ে গেলে আপনার আবেদনপত্রটি নির্ভয়ে আস্তে ধীরে সময় নিয়ে পূরণ করুন। এটা পূরণ করতে গিয়ে প্রতিটা ধাপে সেভ এন্ড কন্টিনিউ নির্ভয়ে চাপুন আর পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যান। কেননা এখানে ভুল হলেও আপনি তা শুদ্ধ করার সুযোগ পাবেন।

এভাবে একে একে আপনার সবগুলো ঘর পূরণ করুন। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আবেদনপত্র পূরণের শেষ ধাপে কনফার্ম অপশন আসবে। এখানে ক্লিক করার আগে আপনি এতক্ষণ যা পূরণ করেছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে নিন।

প্রয়োজন হলে এই ড্রাফটের একটা কপি প্রিন্ট করে নিয়ে ভালোভাবে এর তথ্যগুলো যচাই করে নিন। আপনি এই অবস্থায় আপনার কম্পিউটার থেকে বেরিয়ে গেলেও অসুবিধা নেই । আপনার এতক্ষন ফরম পূরণের সবকিছু সেইভ হয়ে থাকবে।

ধাপ০৪:

সব তথ্য সঠিক থাকলে “Confirm and Submit” বাটনে ক্লিক করুন। ব্যাস আপনার আবেদনের কাজ শেষ। এপর্যায়ে আপনার কাছে আপনি কবে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি উঠাবেন, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিতে যাবেন তার এপয়েন্টমেন্ট এর শিডিউল চাইবে। এবার আপনি আপনার সুবিধামত এপয়েন্টমেন্ট নিন। আর এই এপয়েন্টমেন্ট শিট এর একটি কপি প্রিন্ট করে নিন। এবার আপনার আবেদনের ৩ পাতার মুল কপিটি প্রিন্ট করে রাখুন। ব্যাস।

পাসপোর্টের ফিস জমার নিয়ম

আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিয়ে আপনি নির্দিষ্ট ব্যাংকে আপনার পাসপোর্টের ফিস জমা দিন। মনে রাখবেন আপনার আবেদনে যেভাবে নাম লিখেছেন ব্যাংক এর জমার স্লিপেও নাম  ঠিক হুবুহু একইভাবে লিখবেন।

ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আপনাকে একটা রিসিভ স্লিপ দিবে, যেখানে একটা রেফারেন্স নাম্বার থাকবে। এই রেফারেন্স নাম্বারটা আপনার মূল আবেদনের ৩য় পাতায় নির্ধারিত জায়গায় যত্ন নিয়ে নির্ভুলভাবে লিখুন। আর ৩য় পাতার নিচে আপনি স্বাক্ষর ও তারিখ দিন।

পাসপোর্ট অফিসে আবেদনপত্র জমা

সবকিছু কাগজপত্র পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচের দিকে ব্যাংক জমার স্লিপ, এপয়েন্টমেন্ট লেটার, মুল আবেদনপত্র, নিজের এন.আই.ডির কপি, পুরাতন পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে), স্ত্রীর এন.আই.ডির কপি, কাবিননামার ফটোকপি একসাথে করে একটা সেট বানিয়ে পিনাপ করে সংরক্ষণ করুন আর নিশ্চিন্তে এপয়েন্টমেন্ট দিনের জন্য অপেক্ষা করুন।

আগে থেকে নির্ধারণ করা তারিখে পাসপোর্ট অফিসে দেখা করবেন। সেই প্রিন্ট করা পত্রগুলো ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ নিয়ে। পরে বিভিন্নভাবে আবেদন পত্রগুলো ও জাতীয় পরিচয়পত্র চেক করে পত্রগুলোর উপর সীল মেরে দিয়ে কম্পিউটার কক্ষে যেতে বলবে।

সেখানে যাওয়ার পর ছবি তুলবে, হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের আইরিশ নেওয়া হবে। একইসাথে ফাইল জমা নিয়ে পাসপোর্ট ভেলিভারির একটি স্লিপ দেওয়া হবে।

এরপরে আপনি চাইলে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন এই ঠিকানা থেকে https://www.epassport.gov.bd/authorization/application-status

 পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন

পাসপোর্ট প্রদানের স্লিপ দেওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য জেলা স্পেশাল পুলিশে আপনার ফাইলটি পাঠানো হবে। তারপর আপনার সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ অফিসারের নিকট তদন্তের জন্য আপনার ফাইলটি যাবে। তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য নিম্নোক্ত তথ্য আপনার কাছে চাইতে পারে।

(১) আপনার ও আপনার বাবা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র।
(২) পাসপোর্ট আবেদনে যে পেশা দিয়েছেন তার প্রমাণকপত্র, যেমন: স্টুডেন্ট দিলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।
(৩) বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি বা বিদ্যুৎ বিল কার্ডে রিচার্জ করলে কার্ডের ফটোকপি।
(৪) স্থায়ী জায়গার খতিয়ান।
(৫) বাড়ির চৌহদ্দির তথ্য।
ইত্যাদি।

পাসপোর্ট সংগ্রহ

পাসপোর্ট প্রদানের স্লিপের তারিখ অনুযায়ী আবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা করবেন। সেদিন ফিঙ্গার প্রিন্ট চেক করে ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।

ই-পাসপোর্টের সুবিধাসমূহ

পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ডেটাবেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ হবে পাঁচ ও ১০ বছর। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

ই-পাসপোর্ট
ই-পাসপোর্ট

বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না।

সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে পাবলিক কি ডাইরেকটরিতে (পিকেডি)।

আন্তর্জাতিক এই তথ্যভাণ্ডর পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভাণ্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।

ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে চাহিদামোতাবেক ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হবে।

আমাদের পরামর্শ

পাসপোর্ট গ্রহণে কোন ভূল ও মিথ্যা তথ্য দিবেন না। ভূল বা মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করবেন না কারণ এসব ফৌজদারী অপরাধ। পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোন সমস্যা হলে দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করবেন। পুলিশ ভেরিফিকেশনে ঘুষ চাইলে পাসপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে জানাবেন অথবা সহকারী পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করবেন।

পাসপোর্ট অফিসে কোন সমস্যা হলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী বা অন্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করবেন। তারা বলে দিবে আপনাকে কি করতে হবে বা কোন কক্ষে যেতে হবে।

More from the blog

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী হিসেবে আদালত প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট নয়।...

কিভাবে ফৌজদারী মামলার বিচার হয়?

ফৌজদারী শব্দটি একটি ফারসি শব্দ। মূলত ফৌজ হলো আরবি শব্দ আর দারী শব্দটি ফারসি। ফৌজদারী মামলা বলতে বুঝায় যেসব কাজ করা বা না করা...

ফৌজদারী আদালতের গঠন ও বিচারিক ক্ষমতা

ফৌজদারী আদালত বলতে যে আদালতে মানবসৃষ্ট অপরাধের বিচার হয় তাকে বুঝায়। আমাদের ফৌজদারী আইনের গঠনপ্রণালী অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধকে অনেকভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং অপরাধের...

তামাদি আইনের ২৮ ধারা, বিলুপ্ত হবে সম্পত্তির অধিকার

আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ১২ বছর দখলে থাকলেই সম্পত্তিতে অধিকার সৃষ্টি হয়। তামাদি আইনের ২৮ ধারা মতে এডভার্স পজেশনের মাধ্যমে এই অধিকার বিলুপ্ত হয়।...

You cannot copy content of this page