C-07, 6th floor, Annex Bar Building, Cox's Bazar Court, Bangladesh.

shipta@LegalHome.Org

জমি বে-দখলের আশঙ্কা থাকলে ১৪৪ ধারা?

১৪৪ ধারা কি বা কেন এই নিয়ে অনেকের মনে আছে নানান প্রশ্ন। আপনার পৈত্রিকসূত্রে কিংবা ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত জমি বর্তমানে আপনার দখলে আছে, কিন্তু কিছু স্বার্থলোভী মানুষ কিংবা ভূমিদস্যু ব্যক্তিরা আপনার জমিটি দখল করে নেওয়ার পায়তারা করছে। আপনি যেকোনভাবে খবরটি পেলে প্রথমে আপনি কি করবেন? যেহেতু জোর-জবরদস্তি করে আপনার জমিটি দখলে নেওয়ার পায়তার করছে সেহেতু আপনার প্রথম করণীয় হবে তাদেরকে আইনীভাবে ঠেকিয়ে দেওয়া। এজন্য যেকোন প্রকার দখল ঠেকাতে এবং মারামারি রোধে আপনি চাইলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর কাছে একটি ফৌজদারী দরখাস্ত করতে পারেন।

১৪৫ ধারায় কি বলা হয়েছে?

এই ধারার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো যদি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধের ফলে শান্তিভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে কি করা যায় সে সম্পর্কে। যদি জেলা ম্যজিষ্ট্রেট পুলিশ রিপোর্ট বা অন্যকোনভাবে খবর পান যে তার অধিক্ষেত্রের স্থানীয় সীমার মধ্যে জমি বা পানি বা এর সীমানা সম্পর্কে বিবাদ চলমান যা এলাকার শান্তিভঙ্গ হতে পারে তাহলে তিনি তার দ্বারা নির্ধারিত একটি সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন।

যেহেতু আপনার জমি বে-দখল হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেহেতু লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে আপনাকে দ্রুত জেলা ম্যজিষ্ট্রেটকে উক্ত বিষয়ে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি নিজে কিংবা আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে এই দরখাস্ত করতে পারেন।

এরূপ সংবাদ পাওয়ার পর এই ধারায় বলা হয়েছে ম্যজিষ্ট্রেট দখল সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করবেন। তাছাড়া তিনি যদি উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা দেখেন যে, একপক্ষ বর্তমানে দখলে আছে এবং বিরোধীয় সম্পত্তিতে আইন অনুসারে যথাযথভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পক্ষের দখলে থাকা উচিৎ তাহলে তিনি এই মর্মে ঘোষণা করবেন যে, এরূপ উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। সহজ কথায় আপনার দরখাস্ত মন্জুর হলে তিনি উভয় পক্ষকে শুনানী করার জন্য একটি দিন ধার্য্য করবেন। এবং উক্ত দিনে শুনানীর পর তিনি আইন অনুসারে উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

১৪৪ ধারা এবং আদেশ

১৪৫ ধারা মতে আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি ম্যজিষ্ট্রেট সন্তুষ্ট হন সেক্ষেত্রে ১৪৪ ধারায় জেলা ম্যজিষ্ট্রেট পরবর্তী ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিবেন। সাধারণত এরূপ আদেশ প্রদানের সাথে সাথে দখল অনুসন্ধান এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের থানা এবং সহকারী কমিশনার ভূমিকে আদেশের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়। সহকারী কমিশনার পরবর্তী ধার্য্য তারিখের আগে সরজমিনে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট আদালতের কাছে প্রেরণ করেন। এরমধ্যে ফৌঃকাঃ ১৩৪ ধারা মতে বিবাদিদের কাছে মামলার নোটিশ জারী করা হবে।

আদেশের মেয়াদ কতদিন?

১৪৪ ধারা’র অনুবলে ম্যজিষ্ট্রেট কোন আদেশ জারী করলে এরূপ আদেশ দুই মাসের বেশি কার্যকর থাকবে না। তবে তিনি প্রয়োজন মনে করলে এই আদেশ আবারো বৃদ্ধি করতে পারে। এই ধারার বিধানসমূহ কোন মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে না।

১৪৪ ধারা ভঙ্গের শাস্তি কি?

স্থিতাবস্থা বজায় রাখার এরূপ কোন আদেশ ম্যজিষ্ট্রেট প্রদান করলে তা বিবাদীদের নিকট ১৩৪ ধারামতে নোটিশ বা প্রজ্ঞাপন জারী করতে হয়। আবার এরূপ নোটিশ পাওয়ার পর ১৩৫ ধারা মতে বিবাদী আদেশ পালন করতে বাধ্য অথবা তিনি তা না করতে চাইলে যথাযথ কারণ দর্শাবেন। যদি নোটিশ পাওয়ার পরেও বিবাদীপক্ষ আদেশ ভঙ্গ করে বা নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির না হয়ে কারণ প্রদর্শন না করে তাহলে সে ব্যক্তি দন্ডবিধি ১৮৮ ধারা অনুসারে দন্ডনীয় হবে এবং আবেদনকৃত আদেশটি স্থায়ী করা হবে। এই ধারামতে আদেশ অমান্য ব্যক্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড এবং এক হাজার টাকা অর্থদন্ড হতে পারে।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত

 

মাননীয়,

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, বরগুণা।

সূত্রঃ এম.আর. মামলা নং-           ১০২৪   /২০২১ ইং।

 

বাদী/ ১ম পক্ষের নাম:

১। আনু মুহাম্মদ, পিতা- মৃত জানু মুহাম্মদ

২। করিম উদ্দিন, পিতা- মৃত জসিম উদ্দিন

সর্বসাং- উত্তর পাড়া, জলদহি, থানা- বরগুণা, জেলা- বরগুণা।

বিবাদী/ ২য় পক্ষগণের নাম:

১। মো: রহিম উল্লাহ, পিতা- শামসুল আলম

২। মো: শফিক উল্লাহ, পিতা- ঐ

৩। মো: জালাল উল্লাহ, পিতা- ঐ

সর্বসাং- উত্তর পাড়া, জলদহি, থানা- বরগুণা, জেলা- বরগুণা।

আরো অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জন অস্ত্রধারী ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী।

সাক্ষীগণের নামঃ

১। এজাজ মুহাম্মদ, পিতা- কলিম মুহাম্মদ

২। আশেখ মোহাম্মদ, পিতা- ঐ

৩। রিমা সোলতানা, পিতা- নুরুল কবির

৪। মনোয়ার হোসাইন, পিতা- ঐ

সর্বসাং- উত্তর পাড়া, জলদহি, থানা- বরগুণা, জেলা- বরগুণা।

ঘটনার তারিখ ও সময়ঃ ২8/০২/২০২১ ইং, ভোর অনুমান ৬.০০ ঘটিকা।

 

বিষয়ঃ ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ ধারা মতে ২য় পক্ষগণের বিরুদ্ধে  নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আবেদন।

সবিনয় নিবেদন এই যে,

১। অধীন মামলার বাদীগণ/ ১ম পক্ষগণ সহজ সরল, শান্তিপ্রিয় আইনমান্যকারী অসহায় লোক হই। পক্ষান্তরে ২য় পক্ষ/ বিবাদীগণ চিহ্নিত সন্ত্রাসী, প্রভাবশালী, ভূমিদস্যু, পরসম্পত্তি লোভী, জবর দখলকারী ও অসৎ প্রকৃতির লোক বটে। পর সম্পত্তি জবর দখল করা, ত্রাসের মাধ্যমে এলাকার গণশান্তি বিনষ্ট করা বিবাদীগণের নেশা ও পেশা। তাহারা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি কোন তোয়াক্কা করে না।

২। নি¤œ তপশীলের জমি আমরা ১ম পক্ষগণের খরিদাসূত্রে প্রাপ্ত স্বত্ব দখলীয় জমি হয়। আমরা ১ম পক্ষগণের নামে রাজারকুল মৌজার বি.এস. ১৮০৪৭ নং খতিয়ান চুড়ান্ত প্রচার আছে এবং সন সন খাজনাদায় করিয়া আসিতেছি। ১ম পক্ষগণ নিম্ন তপশীলোক্ত নাল জমিতে সুপারি বাগান রুপন করিয়া বিগত ৩০ (ত্রিশ বছর) এলাকার সর্ব সাধারণের জ্ঞাতসারে ভোগ দখলে রত আছি। উক্ত নাল জমিতে কসমিন কালেও আমার নিরংকুশ স্বত্বে ও ভোগ দখলে কোন প্রকার বিঘ্নতা সৃষ্টি হয় নাই এবং তদ্রুপ হওয়ার কোন কারণও উদ্ভব হয় নাই।

৩। সম্প্রতি ২য় পক্ষগণ লোভের বশবর্তী হইয়া ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২৪/০২/২০২১ ইং তারিখ ভোর ৬.০০ ঘটিকার সময় ২য় পক্ষগণ নিম্ন তপশীলের নাল জমি ও সুপারি বাগান জোর পূর্বক দখল করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সন্ত্রাসী ২য় পক্ষগণ সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে এলাকায় প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিয়া জানান যে, তাহারা আমাদের নিম্ন তপশীলের নাল জমি ও সুপারি বাগান জোর পূর্বক দখল করিবে, তাহাতে আমরা কেহ বাঁধা দিলে আমাদেরকে মারিবে, কাটিবে, খুন জখম করিয়া লাশ গুম করিয়া ফেলিবে এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলা মোকদ্দমায় জড়িত করিবে মর্মে হুমকি ধমকি প্রদর্শন করিতেছে।

৫। এমতাবস্থায় সন্ত্রাসী ২য় পক্ষ/ বিবাদীগণ যদি আমার বর্ণিত নাল জমি ও সুপারি বাগান জোর পূর্বক দখল করতঃ হাঙ্গামা করতে যায় তথায় আমরা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করিলে, নিশ্চিত সেখানে মারামারি, কাটাকাটি, রক্তারক্তি ও খুন খারাবিসহ এলাকার গণশান্তি বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিরাজ করিতেছে।

অতএব বিনীত প্রার্থনা যে, উপরোক্ত কারণে ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে এলাকার গণশান্তি বিনষ্ট রোধে সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও দখলবাজ ২য় পক্ষ/বিবাদীগণের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা মতে কার্যক্রম গ্রহণ পূর্বক অধীনের নিম্নোক্ত তপশীলের জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আদেশ প্রদান করিতে হুজুরের বিহীত মর্জি হয়।

ইতি, তারিখ- ২৭/০২/২০২১ ইং।

তপশীল:

মৌজা- উত্তরপাড়া, থানা- বরগুণা, জেলা- বরগুণা। বি.এস. খতিয়ান নং- ১৮০৪৭, বি.এস. দাগ নং- ১৫২৭৫,১৫২৬৩ এর আন্দর মোঃ ০.১৩ একর নাল শ্রেণী জমি বিরোধীয়।

 

চৌহদ্দি:

উত্তরে- আমির উদ্দিন এর কলা বাগান।

দক্ষিণে- করিম উল্লাহর সুপারি বাগান।

পূর্বে- আব্দুল মান্নানের পতিত জমি।

পশ্চিমে- করিম উল্লাহর সুপারি বাগান।

এই চকবন্দে ০.১৩ একর জমি বিরোধীয়।

সংযুক্তি:

১। রাজারকুল মৌজার বি.এস. ১৮০৪৭ নং খতিয়ানের ফটোকপি।

২। রেজিস্টার খরিদা দলিলের ফটোকপি।

৩। খাজনা পরিশোধের রশিদ।

 

নোট: এই  দরখাস্ত শুধুমাত্র শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহারের জন্য কাল্পনিকভাবে তৈরিকৃত, উক্ত  দরখাস্তে ব্যবহৃত নাম, চরিত্র সবকিছু কাল্পনিক।

More from the blog

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী হিসেবে আদালত প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট নয়।...

কিভাবে ফৌজদারী মামলার বিচার হয়?

ফৌজদারী শব্দটি একটি ফারসি শব্দ। মূলত ফৌজ হলো আরবি শব্দ আর দারী শব্দটি ফারসি। ফৌজদারী মামলা বলতে বুঝায় যেসব কাজ করা বা না করা...

ফৌজদারী আদালতের গঠন ও বিচারিক ক্ষমতা

ফৌজদারী আদালত বলতে যে আদালতে মানবসৃষ্ট অপরাধের বিচার হয় তাকে বুঝায়। আমাদের ফৌজদারী আইনের গঠনপ্রণালী অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধকে অনেকভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং অপরাধের...

তামাদি আইনের ২৮ ধারা, বিলুপ্ত হবে সম্পত্তির অধিকার

আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ১২ বছর দখলে থাকলেই সম্পত্তিতে অধিকার সৃষ্টি হয়। তামাদি আইনের ২৮ ধারা মতে এডভার্স পজেশনের মাধ্যমে এই অধিকার বিলুপ্ত হয়।...

You cannot copy content of this page