জিডি এর বাংলা অর্থ হলো সাধারণ ডায়েরী। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪ ও ১৫৫ ধারা অনুযায়ী পুলিশ জিডি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এই ধারামতে যখন কোন ভারপ্রাপ্ত অফিসারের উক্ত থানার সীমার মধ্যে কোন আমল অযোগ্য মামলার অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হলে তিনি সংবাদের সারমর্ম পুলিশ বেঙ্গল রেগুলেশন এক্ট এর অধীন বইতে লিপিবদ্ধ করেন এবং প্রয়োজন মনে করলে সংবাদদাতাকে ম্যাজিষ্টেটের নিকট প্রেরণ করেন। সুতরাং আমল অযোগ্য যেকোন অপরাধের খবর হলো সাধারণ ডায়েরী বা জিডি।
Table of Contents
কিভাবে ও কখন জিডি করবেন?
জিডি লিখিত কিংবা মৌখিক হতে পারে। কিন্তু লিখিত আকারে জিডি হলে ভালো। আপনি নিজেই জিডি করতে পারেন। জিডি করতে হলে অবশ্যই নিকটস্থ থানায় গিয়ে করতে হবে। বর্তমানে ঢাকার কয়েকটি থানায় অনলাইনে জিডি সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
মূলত কেউ আপনাকে হুমকি দিলে, কেউ নিখোঁজ হলে কিংবা আপনি যদি মনে করেন আপনার নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে কোন নির্দিষ্ট একটি কারণে তখন আপনি যথাযথ কারন উল্লেখপূর্বক সাধারণ ডায়েরী করতে পারেন। তাছাড়া প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্র কিংবা ডকুমেন্ট হারিয়ে গেলে আপনাকে অবশ্যই জিডি করতে হবে।
যেমন: জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, চেক, সনদ, দলিল, মোবাইল ইত্যাদি। মনে রাখবেন জিডি হলো আগে থেকেই কোন অপরাধের সম্ভাবনা থানায় জানিয়ে রাখা যাতে থানা উক্ত অপরাধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারে। জিডি করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না, যদি সংশ্লিষ্ট কেউ কোন প্রকার টাকা পয়সা দাবী করে তা বে-আইনী।
জিডি’র তদন্ত ও জিডি হতে মামলা কখন হয়?
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৫ ধারা মতে জিডির তদন্ত হয়। এই ধারায় উল্লেখ করা আছে যে, যখন কোন সাধারণ ডায়েরীর তদন্তের দরকার পড়ে তখন ক্ষমতাসম্পন্ন কোন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিষ্টেটের আদেশ ব্যতীত কোন পুলিশ অফিসার কোন আমল-অযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করতে পারেন না।
যখন কোন ম্যাজিষ্টেট তদন্তের আদেশ প্রদান করেন তখন বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ব্যতীত তিনি ঘটনার তদন্ত করতে পারেন। তদন্ত করার পর ঘটনার সত্যতা পেলে পুলিশ অফিসার যে রিপোর্ট পেশ করেন তা প্রসিকিউশন রিপোর্ট নামে পরিচিত এবং সে রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে একটি রেজিষ্টারে তা মামলা হিসেবে লিপিভুক্ত হতে পারে যা নন-জি আর মামলা হিসেবে গণ্য হয়।
এটা মনে রাখবেন যে, আপনি যখন কোন অধর্তব্য অপরাধের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরী করেন পুলিশ অফিসার যদি উক্ত ঘটনা গুরুত্বের সাথে নেয় তাহলে ম্যাজিষ্টেটের অনুমতি সাপেক্ষে তা তদন্ত করে সত্যতা পেলে মামলা হতে পারে।
তবে অনেক উচ্চ আদালতের মামলার নজিরে সিধান্ত দেওয়া হয়েছে যে, উপযুক্ত ম্যাজিষ্টেটের বিনা আদেশে তদন্তপূর্বক পুলিশ অফিসার প্রতিবেদন পেশ করলে এবং উক্তরূপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ম্যাজিষ্টেট অধর্তব্য অপরাধ আমলে আনলে সমস্ত কার্যধারা নষ্ট হয়ে যায়। (১৬ ডি.এল.আর ৫২৮)
যেভাবে অনলাইনে জিডি করবেন
দিনের সাথে সাথে জিডি করার ধরণে আধুনিকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশের থানায় জিডি সরাসরি না করে অনলাইনে করা যায়। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট https://gd.police.gov.bd/ ভিজিট করে আপনি চাইলে নিজের স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার থেকে একটি একাউন্ট খোলে জিডির আবেদন করতে পারেন।
তবে অনলাইনে জিডির আবেদন করলেই জিডি হয়ে যায় না। আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে জিডির একটি কপি নিয়ে নিবেন।
হুমকির জিডি’র ফরম্যাট
২৭.১১.২০২০ইং
বরাবর,
অফিসার ইনচার্জ
রামু থানা
রামু, কক্সবাজার।
বিষয়: সাধারণ ডায়েরীর আবেদন।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এইযে, আমি মো: রিদুয়ান ইসলাম, পিতা: আবুল ইসলাম, মাতা: ঝর্ণা ইসলাম, সাং: পূর্ব রাজারকুল, রামু-৪৭৩০, কক্সবাজার পেশায় একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবী এবং নব উদয় সংগঠন এর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি হই। ২৭ নভেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ রোজ শুক্রবার আনুমানিক বিকাল ৪.০০ ঘটিকায় আমি এবং আমার অন্যান্য সহকর্মীবৃন্দ মিলে পূর্ব রাজারকুল নয়াপাড়া গ্রামে নব উদয় সংগঠন এর জন্য গণচাঁদা উত্তোলনে বের হলে পূর্ব রাজারকুল নয়াপাড়া মনমৌউলা মসজিদের সামনে কামাল উদ্দিন, পিতা: জাবের আহমেদ, সাং: পূর্ব রাজারকুল, রামু-৪৭৩০, কক্সবাজার আমাকে জনসম্মুখে হঠাৎ চাঁদাবাজ এবং দালাল বলে গালিগালাজ শুরু করে। প্রায় আধ-ঘন্টা গালিগালাজ করার এক পর্যায়ে আমাকে এক সপ্তাহের মধ্যে জবাই করে হত্যার হুমকি এবং নব উদয় সংগঠন এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। মহোদয় দিন-দুপুরে জনসম্মুখে এবং আমার সহকর্মীবৃন্দের সামনে এহেন হুমকির পরে আমি আমার জান-মাল এবং নব উদয় সংগঠন’র নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছি।
সুতরাং, মহোদয় আমার অমূল্য জীবন এবং রামুর একমাত্র সচল নব উদয় সংগঠন এর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আপনার থানায় এই সাধারণ ডায়েরী লিপিবদ্ধ করার আবেদন জানাচ্ছি।
নিবেদক,
………………………..
মো: রিদুয়ান ইসলাম
মোবাইল: ০১১৭৩-৯৫৪৩৫৩