ট্রাষ্ট হলো সম্পত্তির মালিকানার সাথে সংযুক্ত দায়িত্ব এবং যা অন্যের বা আসল মালিকের উপর অর্পিত ও মালিক কর্তৃক গ্রহীত অথবা তৎকর্তৃক ঘোষিত ও গৃহীত অবস্থা থেকে উদ্ভুত দায়িত্ব। বর্তমানে ১৮৮২ সালের একটি আইন যা ট্রাষ্ট এক্ট নামে পরিচিত। সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিজের কিংবা অন্যের উপকারার্থে কোন সম্পত্তির দায়িত্ব অন্যের উপর ন্যস্ত করা। সম্পত্তির মালিক বা যে ট্রাষ্ট সৃষ্টি করে তাকে আস্থা স্থাপনকারী বা ট্রাষ্ট প্রবর্তক বলে। যার নিকট সম্পত্তির দায়িত্ব দেওয়া হয় কিংবা যে ট্রাষ্ট গ্রহণ করে তাকে ট্রাষ্টি বলা হয়। এবং সর্বশেষ যার বা যাদের বরাবরে বা উপকারার্থে সম্পত্তি ট্রাষ্ট করা হয় তাদেরকে বলা হয় বেনিফিসিয়ারি বা লাভভোগী।
Table of Contents
কিভাবে ট্রাষ্ট গঠন করা হয়?
‘কল্যাণকর স্বত্ব’ বা ‘স্বত্বভোগীর স্বত্ব’ হলো ট্রাষ্ট সম্পত্তির মালিক হিসাবে ট্রাষ্টীয় বিপক্ষে তার অধিকার এবং যে দলিল (যদি থাকে) দ্বারা ট্রাষ্ট ঘোষণা করা হয় সেই দলিলকে বলা হয় ‘ট্রাষ্টের দলিল’। ট্রাষ্ট সৃষ্টি করার জন্য যে কোন ধরণের সম্পত্তি অপরের জিম্মায় ন্যস্ত করতে হবে। এ সম্পর্কে নিরঙ্কুশ ইচ্ছা প্রকাশ করে ট্রাষ্টি সৃষ্টি করবার স্বপক্ষে ঘোষণা করতে হবে। ট্রাষ্টকর্তা যে সম্পত্তি ট্রাষ্ট করতে চান সে সম্পত্তির নির্ভূল বর্ণনা এবং যাকে ট্রাষ্টি নিয়োগ করতে চান তাদের পরিচয় স্পষ্টভাবে দিতে হবে। তাছাড়া যাদের উদ্দ্যেশে বা উপস্বত্বভোগী বা বেনিফিসিয়ারিদের পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে ট্রাষ্ট সৃষ্টি করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী ট্রাষ্ট দলিল রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
কারা ট্রাষ্টকর্তা বা ট্রাষ্টি হতে পারে?
যে ব্যক্তির আইনানুগভাবে চুক্তি আইন অনুসারে সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হতে বাধা নাই তিনি সম্পত্তি ট্রাষ্ট করতে পারেন। যদি কোন নাবালক ট্রাষ্ট করতে চান সেক্ষেত্রে দেওয়ানী আদালতের অনুমতি গ্রহণ পূর্বক ট্রাষ্টনামা দলিল সম্পদিন করা যেতে পারে।
যে সকল ব্যক্তির নিজ নামে কোন প্রকার সম্পত্তি অর্জনে কোন বাধা নেই তাদেরকে ট্রাষ্টি নিয়োগ করা যায়। ট্রাষ্টি নিয়োগ করার আগে অবশ্যই ট্রাষ্টিদের ব্যক্তিগত মতামত গ্রহণ করতে হবে এই কারণে যে তাদের কোন প্রকার চুক্তিবদ্ধ হতে বাধা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
আইনানুগভাবে কোন বাধা নেই এরকম সকল ব্যক্তি সম্পত্তির বেনিফিসিয়ারি হতে পারে।
কি কি উদ্যেশে ট্রাষ্ট করা যায়?
ভবিষ্যতে একই পরিবারের কারো বিয়ে কিংবা নিজের স্ত্রীর স্বার্থ আছে এমন কোন বিষয়ে ট্রাষ্ট করা যায়। একই পরিবারের কোন সদস্যদের আলাদা কোন স্বার্থের জন্য কিংবা পোষ্য কোন সদস্যদের স্বার্থের জন্য ট্রাষ্ট গঠন করা যেতে পারে। তাছাড়া এই আইনের মূল যে লক্ষ্য তা হলো জনহিতকর, দাতব্য ও ধর্মীয় উদ্দ্যেশে সম্পত্তি ট্রাষ্ট করা যায়। সঠিকভাবে উদ্দেশ্য পালনের জন্য ট্রাষ্টি নিয়োগ করা হয়। মূলত উক্ত বিষয়সমূহ পরিচালনার জন্য ট্রাষ্ট করা হয়ে থাকে। এসব বিষয় ছাড়াও যে কোন আইন স্বীকৃত উদ্দেশ্যে সম্পত্তি ট্রাষ্ট করা যেতে পারে।
কখন ট্রাষ্ট গঠন অবৈধ হতে পারে ?
আমরা আগেই জেনেছি ট্রাষ্ট যে কোন আইনগত উদ্দেশ্যে গঠন কর যেতে পারে। কিন্তু ট্রাষ্ট এক্ট অনুযায়ী যদি কোন আইনত নিষিদ্ধ বা আইন বিরুদ্ধ কোন কাজ সম্পাদন, শঠতা ও প্রতারণামূলক কাজ করার উদ্দেশ্যে, অপরের শারীরিক ও বৈষয়িক ক্ষতি সাধন বা বিনষ্ট করা উদ্দেশ্যে যদি ট্রাষ্ট করা হয় তাহলে উক্ত সম্পাদনকৃত ট্রাষ্ট অবৈধ হবে। এক কথায় আইন বিরুদ্ধ উদ্দেশ্যে কোন ট্রাষ্ট গঠন করা হলে তা বাতিল হয়ে যাবে।
ট্রাষ্টনামা দলিলের ফরম্যাট
ট্রাস্টনামা দলিল
(সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পাঠাগার স্থাপন কল্পে)
১) মো: গোল হোসন
২) আব্দুল আলীম
পিতা- মো: শামসুল আলম, সর্ব সাকিন- পূর্ব রাজারকুল (বড়ুয়া পাড়া), থানা- রামু, জেলা- কক্সবাজার, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- কৃষি, জাতীয়তা- বাংলাদেশী।
………….. দলিল দাতা
১) মনোয়ার হোসেন, পিতা- আব্দুল আজম
২) আনোয়ার হোসেন, পিতা- জাহেদ হোসেন
৩) দিলদার বেগম, পিতা- মো: জামাল উদ্দিন
সর্ব সাকিন- পূর্ব রাজারকুল (বড়ুয়া পাড়া), থানা- রামু, জেলা- কক্সবাজার, ধর্ম- ইসলাম, জাতীয়তা- বাংলাদেশী।
……………. ট্রাস্টিগণ
কস্য ট্রাস্ট দলিল পত্র মিদং কার্যাঞ্চাগে আমি দলিলদাতা নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি পৈতৃক ওয়ারিসান সূত্রে প্রাপ্ত হইয়া দীর্ঘযুগ ধরিয়া অন্যের নিরাপত্তে মালিক দখলকার নিয়ত আছি। বর্তমানে আমি অতিশয় বৃদ্ধ হইয়া পড়িয়াছি এবং যেকোন সময়ে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ইহকাল ত্যাগ করিয়া অনন্ত শান্তির রাজ্যে চলিয়া যাইতে পারি। শেষ জীবনে এই বৃদ্ধ অবস্থায় মানব কল্যাণ আমার একমাত্র চিন্তা ও কাম্য। এমতাবস্থায় নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি মানব সেবা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য চর্চা কল্পে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার’র অধীনে ট্রাস্ট করিতে সুস্থির করতঃ উপরোক্ত দ্বিতীয় পক্ষকে তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির ট্রাস্ট নিযুক্ত করিলাম।
অত্র ট্রাস্ট দলিল দ্বারা উল্লেখ, প্রকাশ ও ঘোষণা করিতেছি যে মূলতঃ নিম্নোক্ত ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি ট্রাস্ট করা হইল। যথা :
১) তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির ১০8৯৬ নং দাগে অবস্থিত বর্তমান আধাপাকা পাঠাগার ঘরটিকে দুই তলা ঘর যাহা কাঠ, লোহা ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করে একটি দাতব্য গণ-গ্রন্থাগার স্থাপন করা, যাহার নাম হইবে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার।
২) জ্ঞানান্বেষণ গণ-গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য সুশিক্ষিত পরিচালক ও সদস্যবৃন্দ নিয়োগ করা যা কার্যকরী পরিষদ নামে অভিহিত হইবে।
৩) স্থানীয় জনসাধারণের মানসিক উন্নতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা করা জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার’র মূল কাজ হইবে।
৪) জ্ঞান চর্চার জন্য নিয়মিত বইপাঠ এবং পাঠচক্রে বসা।
৫) নিয়মিত মনকে ভালো রাখার জন্য গণ-গ্রন্থাগার অভ্যান্তরে খেলাধুলায় নিমজ্জিত থাকা, যাহা বিরক্তিকর ও জনক্ষতিকার কোন খেলাধুলা হইবে না।
৬) তফসিল বর্ণিত ট্রাস্টকৃত সম্পত্তিতে অবস্থিত গৃহ অর্থকরিভাবে তছরূপ, ব্যবহার ও বিনিয়োগ করা, যাহা হইতে পাঠাগার পরিচালনা ব্যয় আসিতে পারে।
৭) ট্রাস্টের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হইতে পারে এজন্য এককালীন দান, অনুদান ও মঞ্জুরী গ্রহণ।
৮) নারী’র ক্ষমতায়ন, কুসংস্কার প্রতিরোধ, সঠিক ধর্ম চর্চা, মাদক নির্মুল, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ এবং সমাজের জন্য উপকার হইবে এমন কাজ করা।
৯) জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার’র উদ্দ্যেগে সিমেমা সংসদ গঠন করিয়া নিয়মিত গ্রামের মানুষ এবং স্কুলে সিনেমা প্রদর্শনী করা।
১০) জ্ঞানান্বেষণ ব্লাড ডোনেশন ক্লাব হইতে প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে ব্লাড জোগাড় করিয়া দেওয়া।
১১) দেশের স্বার্থে যেকোন সময় পাঠাগার’র সদস্যবৃন্দের অবদান রাখা ইত্যাদি।
উল্লেখ যে ট্রাস্টের উদ্দেশ্য বাস্তবে রূপান্তরিত করিবার জন্য ট্রস্টিগণ তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করিবেন কিন্তু তাহারা ট্রাস্টকৃত সম্পত্তি বিক্রয় বা কোন প্রকার হস্তান্তর করিতে পারিবেন না কিংবা ব্যক্তিগত কোন উপকারে ব্যবহার করিতে পারিবেন না। তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ এবং ট্রাস্টের যাবতীয় ক্রিয়াকর্মে সংখ্যাধিক্য ট্রাস্টির মতে গ্রহণীয় হইবে। দলিলদাতার জীবদ্দশায় যদি কোন ট্রাস্টির মৃত্যু হয় তাহা হইলে দলিল দাতা মৃত ব্যক্তির স্থলে নতুন একজনকে নিয়োগ করিবেন। আর দলিল দাতার মৃত্যুর পর যে কোন ট্রাস্টির মৃত্যু হইলে দলিলদাতার ছেলে-মেয়ে বংশধরদের মধ্যে কর্মঠ, সৎ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিকে ট্রাস্টি নিযুক্ত করা যাইবে; দলিল দাতার বংশধরদের মধ্যে পুরুষ লোক না থাকিলে বা অভাব হইলে মেয়ে বা মেয়েদের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে সৎ ও কর্মঠ লোককে ট্রাস্টি নিযুক্ত করা চলিবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য ট্রাস্টিদের মতামত বিবেচনায় রাখিতে হইবে।
ট্রাস্টিগণ তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির আয় হইতে দলিলে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলির খরচপত্র চালাইবেন এবং উদ্বৃত্ত আয় ট্রাস্ট সম্পত্তির বৃত্তি ও স্বার্থে লগ্নি করিতে পারিবেন। উল্লেখ থাকিল যে দলিল দাতার তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির উপর স্থিত স্বত্ব, স্বামীত্ব, দখল অধিকার লোপ হইয়া তৎতাবদ ট্রাস্টিদের উপর বর্তাইল এবং ট্রাস্টির ট্রাস্টকৃত সম্পত্তি গ্রহণে স্বীকৃত হইয়াছেন।
এতদ্বারা স্বেচ্ছা, স্ব-জ্ঞানে ও সুস্থ মস্তিষ্কে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র ট্রাস্ট দলিল সম্পাদন করিয়া দিলাম।
ট্রাস্টকৃত জমির তফসিল
জেলা : কক্সবাজার মৌজা: রাজারকুল
থানা/উপজেলা : রামু জে এল নম্বর : ৩৮ নং
এস.এ- ২৬৪(দুইশত চৌষট্টি)নং
আর,এস- ৮৩(তিরাশি)নং ও ৮৮(আটাশি)নং
খতিয়ানে মোট জমি- ১ একর ৮১শতাংশ।
ট্রাস্টকৃত জমি- ১ শতক ০২ শতাংশ।
দাগ নং
১। সাবেক ও এস.এ-১১৩(একশত তের)নং, ১৬৮/১১৮৬(একশত আটষট্টি এর বাট্টা এগারশত ছিয়াশি)নং, এবং যাহার আর.এস দাগং
১। আর,এস-২৭৭১(দুই হাজার সাতশত একাত্তুর)নং দাগে বাইদ জমি———————–৮৮শতাংশ।
ইহার কাতে আমার হেবাকৃত বীজকড়া জমির পরিমান-১৪(চৌদ্দ) শতাংশ। স্থানীয় মাপে ৫(পাঁচ) কড়া জমি ট্রাস্টকৃত মাত্র। যাহা ট্রাস্টিগণের প্রাপ্ত জমির পরিমান-১.২ (এক দশমিক দুই) শতাংশ যাহা এস,এ-১২৪ নং দাগ হইতে ভোগদখল বুঝাইয়া দিলাম।
১২। ট্রাস্টকৃত সম্পত্তির চৌহদ্দির বিবরন :
উত্তরে :-নিজ। দক্ষিনে :-রাস্তা।
পূর্বে :-রাস্তা। পশ্চিমে :-নিজ।
০০৯ ইং, বাইশ, তিন, দুই হাজার নয় সন।
অত্র দলিলে কাগজ ২ ফর্দ, দাতা ২ জন, গ্রহিতা ও গ্রহিত্রী ৬ জন, সাক্ষী ৩ জন।
অত্র দলিল পাঠ করিয়া ও করাইয়া মর্ম অবগত হইলাম।
দাতার স্বাক্ষরঃ
সাক্ষী :
১।
২।
৩।
কম্পিউটার কম্পোজকারক মোসাবিদাকারক ও দলিল লিখক
সাব-রেজিষ্টারের নাম ও পদবী সহ স্বাক্ষর ও তারিখ :