আজকের পর্বে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আলোচনা করবো। লিগ্যাল হোমের দৈনন্দিন জিজ্ঞাসা বিষয়ক টিউটোরিয়ালে স্বাগতম। কিভাবে অনলাইনে যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন তা নিয়ে আজকের পর্বে আলোচনা করব।
Table of Contents
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি?
ড্রাইভিং লাইসেন্স হলো সড়কে বা মহাসড়কে বিভিন্ন ক্যাটাগরিভিত্তিক যানবাহন চালনার জন্য সরকারি অনুমতিপত্র। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিত যানবাহন চালনায় রয়েছে কড়া বাধা-নিষেধ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করা জরুরী কেনো?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স বা, ক্ষেত্রমত, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে পাবলিক প্লেসে কোনো মোটরযান চালাতে বা চালানোর অনুমতি প্রদান করতে পারবেন না।
একই ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যে শ্রেণি বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালনার লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন, সেই শ্রেণি বা ক্যাটাগরি ব্যতীত অন্য কোনো শ্রেণি বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালাতে পারবেন না।
তবে শর্ত থাকে যে, ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি হালকা ও মধ্যম শ্রেণি বা ক্যাটাগরির মোটরযান চালাতে পারবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যাতীত মোটরযান ও গণপরিবহণ চালনার বিধি-নিষেধ সংক্রান্ত ধারা ৪ এবং ৫ এর বিধান লঙ্ঘনের জন্য অনধিক ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ড, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আরেকটি আর্টিকেল আছে, সেটিও পড়তে পারেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার প্রথম ধাপ
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষানবিশ অথবা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স করা। লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইনে করতে আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটারের যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে টাইপ করুন bsp.brta.gov.bd
এটি বি.আর.টি.এর অফিসিয়াল সেবা বাতায়ন ওয়েবসাইট। এখানে প্রবেশ করার পর নিবন্ধন অপশনে গিয়ে নিবন্ধন করে নিন। আগে নিবন্ধন করা থাকলে লগিন করুন। লগিন করার পর একটি ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবেন। এই ড্যাশবোর্ড ব্যবহার করে বি.আর.টি.এর যাবতীয় সেবা নেওয়া যায়।
লার্নার বা শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন
ড্যাশবোর্ডে যাওয়ার পর লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে বাম পাশের মেনুবার থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সে ক্লিক করুন। এখানে ক্লিক করার পর কিছু সাবমেনু বের হবে। এখান থেকে শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য আবেদনে ক্লিক করুন। তারপর লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে সে বিষয়ক একটি চেকলিস্ট পাবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে
নিয়ম অনুযায়ী লার্নার বা শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আপনার এক কপি ছবি যার সর্বোচ্চ সাইজ ১৫০ কেবি হতে পারবে, রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট যার ফর্ম এখান থেকেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এরপর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার স্ক্যান কপি লাগবে। এসব ডকুমেন্টস আপনি ক্যামস্ক্যানার অথবা অন্যকোন স্ক্যানিং এপ দিয়ে স্ক্যান করে নিতে পারেন। তাহলে আমরা দেখতে পাই ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে সর্বমোট ৫ প্রকারের ডকুমেন্টস প্রয়োজন। এসব ডকুমেন্টস প্রস্তুত হলে পরের ধাপে যান।
অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম পূরণ
উপরের দেওয়া ডকুমেন্টস রেডি হয়ে গেলে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার উপযুক্ত। চেকলিস্টের নিচে আমি সম্মত বাটনে ক্লিক করলে নতুন একটি ফর্ম ও উইন্ডো ওপেন হবে।
এখান থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অপেশাদার অথবা পেশাদার সিলেক্ট করুন। যারা গাড়ি চালানোকে পেশা হিসেবে নিবেন তারা পেশাদার আর যারা অন্য কাজের জন্য নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিজেই চালাবেন সেক্ষেত্রে অপেশাদার সিলেক্ট করবেন।
এখানে ছবির জায়গায় এক কপি ছবি এটাচ করে নিন, যার সাইজ অবশ্যই ৩০০ বাই ৩০০ পিক্সেল হতে হবে। ছবি রিসাইজ করার জন্য এই টুল ব্যবহার করতে পারেন। এরপর নিচে থাকা সেকশন এ তে গিয়ে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিন।
এই দুই তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে পাশে থাকা সার্চ আইকনে ক্লিক করলে আপনার সম্পূর্ণ তথ্য অটোমেটিক সিস্টেম থেকে আংশিক ফর্ম ফিলাপ হয়ে যাবে। পাশাপাশি জন্ম তারিখের নিচে আপনার বয়স লার্নার লাইসেন্স আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য কিনা জানাবে।
এসব ঠিকঠাক হয়ে গেলে ফর্মে যেসব ঘর খালি আছে তা সঠিকভাবে পূরণ করে নিন। এরমধ্যে ইংরেজীতে পিতার নাম, মাতার নাম, বৈবাহিক অবস্থা, পেশা, রক্তের গ্রুপ, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ম্যানুয়ালি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীর সাথে যোগাযোগের বিবরণ, জরুরী যোগাযোগের বিবরণের ঘর পূরণ করতে হবে।
এসব ঘর পূরণের পর সেকশন বিতে গিয়ে পরীক্ষার স্থানে আপনার সংশ্লিষ্ট বি.আর.টি.এ অফিসের ঠিকানা সিলেক্ট করুন। তারপর আপনার কোন যানবাহনের জন্য লাইসেন্সের আবেদন করবেন তা এখান থেকে সিলেক্ট করে নিন।
যদি শুধু মোটরসাইকেলের জন্য করতে চান সেক্ষেত্রে মোটরসাইকেল আর যদি কার, মাইক্রো বা ছোট যানবাহনের জন্য করতে চান সেক্ষেত্রে লাইট সিলেক্ট করুন। যদি মোটরসাইকেল এবং গাড়ি উভয়ের জন্য একসাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চান সেক্ষেত্রে দুইটাই সিলেক্ট করুন।
এরপরের ধাপ হলো সংযুক্তি। রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত মেডিকেল সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি, জাতীয় পরিচয় পত্রের স্ক্যান কপি, শিক্ষাগত যোগ্যতা মানে যেকোন একটি সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি, ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করে নিন। অবশ্যই মনে রাখবেন এসব স্ক্যান কপির সাইজ সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি হতে পারবে। এর বেশি হলে কাজ হবে না।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফিস জমা
এসব ডকুমেন্টস আপলোড হয়ে গেলে সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করুন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে প্রদত্ত সকল তথ্য সংম্বলিত একটি প্রিভিউ দেখাবে এবং একটি সার্ভিস আইডি ইস্যু হবে।
এখান থেকে আবারো সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল আছে কিনা যাচাই করে নিন। যদি ঠিক থাকে ফিস জমা দিন বাটনে ক্লিক করে সামনে এগিয়ে যান।
ফিস জমা দেওয়ার জন্য গেটওয়ে ওপেন হলে যে নতুন উইন্ডো আসবে এখান থেকে মোবাইল নাম্বারের পাশের বক্সটিতে ঠিক দিয়ে দিন। ঠিক চিহ্ন দিয়ে আপনার কাঙ্কিত পেমেন্ট মেথড থেকে পেমেন্ট করে দিন।
শুধু মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৩৪৫ টাকা ফিস, লাইট ভেহিকেলের জন্যও একই। যদি একসাথে মোটরসাইকেল এবং লাইট ভেহিকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন সেক্ষেত্রে ৫১৮ টাকা
লার্নার বা শিক্ষানবীশ লাইসেন্স ডাউনলোড
ফিস জমা হয়ে গেলে বাম পাশের মেনুবারে একদম নিচে থাকা ফি পরিশোধের বিবরণে চলে আসুন। এখানে ফিস পরিশোধের রিসিট ডাউনলোড করতে পারবেন। পাশাপাশি ড্যাশবোর্ডে গিয়ে শিক্ষানবীশ লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য অপশনে ক্লিক করে আপনার লার্নার বা শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। ফিস জমা হয়ে গেলে একটি শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স অটো জোনরেট হয়ে যাবে।
লার্নার লাইসেন্সে আপনার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখপূর্বক পরীক্ষার তারিখ ও সময় দেওয়া থাকবে। সাধারণত লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার এক মাস কিংবা দুইমাস পরে পরীক্ষার দিন তারিখ হয়ে থাকে। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে এই লার্নার কার্ডটি ডাউনলোড করে নিয়ে আপনার সংশিষ্ট বি.আর.টি.তে যোগাযোগ করুন।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স
মূলত পরীক্ষায় পাশ করলে এরপর আপনার স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবারো সরকার নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে আরেকটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে করবেন তা নিয়ে আমাদের আরেকটি আর্টিকেল ও ভিডিও আছে চাইলে সে ভিডিউটি ও আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।
শেষকথা
পাঠক এই ছিলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে পূর্ণাঙ্গ টিউটোরিয়াল। লেখাটি যদি উপকারী মনে হয় তাহলে শেয়ার করুন, কমেন্ট করে জানান আপনার মূল্যবান মতামত। লিগ্যাল হোমের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।