C-07, 6th floor, Annex Bar Building, Cox's Bazar Court, Bangladesh.

shipta@LegalHome.Org

পুলিশ কখন গ্রেফতার করতে পারে?

পুলিশ কখন গ্রেফতার করতে পারে বা বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করার আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে আজকের লেখায় আলোচনা করবো। ফৌজদারী কার্যবিধির কয়েকটি ধারায় গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। বিস্তারিত জানতে পুরো লেখাটি পড়ুন। এই ধারাগুলো আপনার জানা থাকলে কখনো অনাকাঙ্কিত ঝামেলায় পড়ে গেলে তা এড়াতে পারবেন।

বিনা বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ধারাসমূহ

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী আদালতের পরোয়ানা পেলে একজন ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। আইন অনুযায়ী পুলিশ বিনা-পরোয়ানায় সচরাচর কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না। কিন্তু কিছু কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করার ক্ষমতা রাখে এবং তা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফৌজদারি কার্যবিধি একটি পদ্ধতিগত আইন। এই আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় বলা আছে পুলিশ কখন একজন ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে। বিশেষ করে ৫৪, ৫৫, ৫৭, ১২৮, ১৫১, ৪০১(৩) এই ছয়টি ধারানুযায়ী পুলিশ বিনা-পরোয়ানায় কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে।

এসব ধারার অধীন ছাড়া কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য অবশ্যই আদালতের পরোয়ানা দরকার হবে। অন্যথায় পুলিশ কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে না। নিম্নে কোন কোন ধারায় পুলিশ একজন ব্যক্তিকে বিনা-পরোয়নায় গ্রেফতার করতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পুলিশ এই ধারার অধীন বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করে থাকে। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোন আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা যার বিরুদ্ধে এরূপ অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে তাকে পুলিশ পরোয়ানা ব্যতিত গ্রেফতার করতে পারে। আমলযোগ্য অপরাধ কোনগুলো তা দেওয়া আছে ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসিলের তৃতীয় কলামে।

আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া যদি কারো নিকট ঘর ভাঙার কোন সরন্জাম থাকে, সরকারি আদেশে যদি কাউকে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে থাকে অথবা কোন ব্যক্তির কাছে চোরাইমালজাতীয় কোন জিনিস পাওয়া যায় বা যুক্তিসংগতভাবে বিশ্বাসের অবকাশ থাকে সেরূপ ব্যক্তিকেও বিনা পরোয়ানায় এই ধারার অধীন গ্রেফতার করা যাবে।

যে ব্যক্তি একজন পুলিশ অফিসারকে তাঁর কর্তব্য করাকালীন বাধা প্রদান করে অথবা পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য অন্য একজন পুলিশ অফিসারের নিকট থেকে অনুরোধ পাওয়া গেলেও গ্রেফতার করা যায়।

এই ধারা অনুযায়ী উপরোক্ত কারণে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে এবং এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারা

ভবঘুরে ও অভ্যাসগত দস্যু প্রভৃতির ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা রয়েছে পুলিশের। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের যদি এরূপ যুক্তিসংগতভাবে বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, থানার এলাকার মধ্যে কোন ব্যক্তি নিজের উপস্থিতি গোপন করার জন্য সাবধানতা গ্রহণ করছে অথবা কোন আমলযোগ্য অপরাধ সংগঠনের উদেশ্যে ঘুরাফেরা করছে তাহলে ভারপ্রাপ্ত অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে বা করাতে পারেন।

দ্বিতীয়ত যদি কোন ব্যক্তি থানার এলাকার মধ্যে প্রকাশ্য আয়ের উৎস নেই বা নিজ সম্পর্কে কোন সন্তোষজনক বিবরণ দিতে না পারে সেরূপ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যায়।

তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি অভ্যাসগতভাবে ডাকাত, গৃহভঙ্গকারী অথবা চোর হিসেবে পরিচিত বা যে ব্যক্তির অভ্যাসগতভাবে চোরাইমাল গ্রহণের দুর্নাম আছে বা যে ব্যক্তি অভ্যাসগতভাবে বলপূর্বক অন্যের সম্পত্তি গ্রহণ বা এরূপ উদ্দেশ্যে অন্যকে আঘাতের ভীতি প্রদর্শন করে মর্মে দুর্নাম আছে।

উক্তরূপ ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারা মোতাবেক পুলিশ বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৭ ধারা

যখন কোন ব্যক্তি কোন পুলিশ অফিসারের উপস্থিতিতে কোন আমল অযোগ্য অপরাধ করে অথবা এরূপ অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং উক্ত অফিসার দাবী করলে নিজ নাম, ঠিকানা দিতে অস্বীকার করে। অথবা এমন নাম, ঠিকানা প্রদান করে থাকে যা সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের নিকট মিথ্যা বলে মনে হয় তখন পুলিশ অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারেন এবং এই ধারার নিয়ম অনুসারে নাম, ঠিকানা জানার পর তাকে মুক্তি দিতে পারেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৮ ধারা

এই ধারায় আলোচনা করা হয়েছে, বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গকে আইন অনুসারে শাস্তি দেওয়ার জন্য আদালতে প্রেরণ করার জন্য পুলিশ গ্রেফতার বা আটক করতে পারেন। বে-আইনী সমাবেশ বলতে এমন সমাবেশকে বুঝাবে যে সমাবেশের কারণে গণ-শান্তি বিনষ্ট হয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারা

যদি কোন পুলিশ অফিসার কোন আমলযোগ্য অপরাধ হবে এমন ষড়যন্ত্রের খবর পান অথবা তাঁর নিকট প্রতীয়মান হয় যে, এই অপরাধ সংঘটন অন্যভাবে নিবারণ করা যাবে না, তাহলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তিকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করতে পারেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(৩) ধারা

এই ধারায় মূলত একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর দন্ড স্থগিত বা মওকুফ করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সরকার চাইলে যেকোন সময় যে কোন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে এই ধারার অধীন মুক্তি দিতে পারে। একই ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে সরকার একজন আসামীর যে সকল শর্তে দন্ড স্থগিত বা মওকুফ করেছে তার কোনটি পালন করা হয়নি বলে অনুমিত হলে সরকার মওকুফের আদেশ বাতিল করতে পারে।

এরূপ আদেশ প্রদান করা হলে যেকোন পুলিশ অফিসার তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারবেন এবং তাঁর দন্ডের অনতিবাহিত অংশ ভোগ করার জন্য তাকে জেলে প্রেরণ করা যাবে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে ফৌজদারি কার্যবিধির মোট ছয়টি ধারায় পুলিশ বিনা-পরোয়ানায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে। উক্ত ধারা ব্যতিত অন্যকোন বিশেষ আইনে উল্লেখ থাকলেও অনেক সময় পুলিশ বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে। এক কথায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করার ক্ষমতা পুলিশের অনেকটা সহজাত ক্ষমতা। ‍উপরোক্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, থানায় দায়ের করা প্রত্যেক মামলায় পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে।

More from the blog

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী হিসেবে আদালত প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট নয়।...

কিভাবে ফৌজদারী মামলার বিচার হয়?

ফৌজদারী শব্দটি একটি ফারসি শব্দ। মূলত ফৌজ হলো আরবি শব্দ আর দারী শব্দটি ফারসি। ফৌজদারী মামলা বলতে বুঝায় যেসব কাজ করা বা না করা...

ফৌজদারী আদালতের গঠন ও বিচারিক ক্ষমতা

ফৌজদারী আদালত বলতে যে আদালতে মানবসৃষ্ট অপরাধের বিচার হয় তাকে বুঝায়। আমাদের ফৌজদারী আইনের গঠনপ্রণালী অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধকে অনেকভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং অপরাধের...

তামাদি আইনের ২৮ ধারা, বিলুপ্ত হবে সম্পত্তির অধিকার

আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ১২ বছর দখলে থাকলেই সম্পত্তিতে অধিকার সৃষ্টি হয়। তামাদি আইনের ২৮ ধারা মতে এডভার্স পজেশনের মাধ্যমে এই অধিকার বিলুপ্ত হয়।...

You cannot copy content of this page