মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট নিতে চাইলে আপনাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। মদ পানের লাইসেন্স জরুরী তাদের জন্য যারা বারে গিয়ে নিয়মিত দেশি বা বিদেশী মদ পান করে থাকেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ তে কিভাবে মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিটের আবেদন করবেন এবং বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি নিজেই নিজের মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট করতে চাইলে আজকের এই লেখাটি পড়তে পারেন। মনে রাখবেন এই লেখাটি কোনভাবে কাউকে মদ পানে উৎসাহিত করে না। আমরা লিগ্যাল হোমের পক্ষ থেকে মদ পানে আপনাকে নিরুৎসাহিত করছি।
Table of Contents
মদ বা অ্যালকোহল কি?
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংজ্ঞায় বলা আছে ‘অ্যালকোহল (Alcohol)’ অর্থ [হাইড্রোকার্বনজাত হাইড্রোক্সিল (OH-] মূলকসম্বলিত কোনো জৈব যৌগ অথবা তপশিলের ‘খ” শ্রেণির মাদকদ্রব্যের ক্রমিক নং ৩ এবং ‘গ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্যের ক্রমিক নং ১ ও ২ এ উল্লিখিত কোনো তরল পদার্থ।
তফসিলের “খ” শ্রেণীর মাদকদ্রব্যের ক্রমিক নং ৩ এ উল্লেখ আছে, ইথাইল অ্যালকোহল (ইথানল), অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, র্যাকটিফাইট স্পিরিট, ০.৫% এর অধিক অ্যালকোহল সহযোগে প্রস্তুতকৃত যে-কোন তরল পদার্থ অথবা ঔষুধ (যা আসক্তি সৃষ্টিতে সক্ষম এবং যা নেশার উপকরণ হিসেবে পান করা হচ্ছে অথবা হতে পারে), ওয়াইন, বিয়ার, ওয়াশ (জাওয়া), চোলাই মদ, যে-কোন ধরণের মদ, কিংবা নেশা সৃষ্টিকারী ০.৫% এর অধিক অ্যালকোহলযুক্ত যেকোন দ্রব্য।
তফসিলের “গ” শ্রেণীর মাদকদ্রব্যের ক্রমিক ১ এ উল্লেখিত আছে, তাঁড়ি, পঁচুই ইত্যাদি। এবং ক্রমিক ২ এ উল্লেখ আছে, মিথাইল অ্যালকোহল (মিথাইল), মিথানল মিশ্রিত যেকোন তরল রাসায়নিক পদার্থ, ডিনেচার্ড স্পিরিট, মেথিলেটেড স্পিরিট, ইথাইল অ্যালকোহল ব্যতীত অন্যসকল প্রকার অ্যালকোহল, সোপ স্পিরিট কিংবা মানুষ পানের অনুপযোগী যেকোন ধরণের বাণিজ্যিক স্পিরিট।
মদ পান সম্পর্কে আইনে যা বলা আছে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ১১ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে পারমিট ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশী মদ অ্যালকোহল পান করতে পারবেন না এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অন্যূন কোনো সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করার জন্য পারমিট প্রদান করা যাবে না।
একই ধারার (২) উপধারায় বলা আছে, মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসমূহ এবং অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক তাড়ি ও পচুঁই ও ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত অথবা প্রস্তুতকৃত মদ পান করার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
এই ধারার (৩) উপধারার আলোচনায় বলা হয়েছে, উপ-ধারা (১) এ যা কিছু থাকুক না কেন-
(ক) লাইসেন্সপ্রাপ্ত বারে বসে বিদেশি ও পারমিটধারী দেশীয় নাগরিকগণ অ্যালকোহল পান করতে পারবেন; এবং
(খ) কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী বিদেশী নাগরিকরা শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত পাস বইধারী অথবা প্রচলিত ব্যাগেজ রুলসের দ্বারা স্বীকৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে, অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, ক্রয়, বহন, সংরক্ষণ অথবা পানের ব্যাপারে কোনো কিছুই প্রযোজ্য হবে না।
পাশাপাশি বাংলাদেশে মদের দোকান সম্পর্কে বাংলাদেশে মদের আইন মাদকদ্রব্য আইনে বলা আছে।
মদ পানের লাইসেন্স সম্পর্কে আইনী ব্যখ্যা
মদ পানের লাইসেন্স সম্পর্কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৩ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স, পারমিট ও পাস বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, ফরমে, শর্তে এবং ফিস প্রদান সাপেক্ষে মহা-পরিচালক অথবা তার নিকট থেকে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন অফিসারের নিকট আবেদন করা যাবে।
উপধারা (২) অনুযায়ী, লাইসেন্স, পারমিট অথবা পাসের মেয়াদ উহাতে উল্লিখিত শর্তে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অথবা তা প্রদানের তারিখ হইতে সংশ্লিষ্ট অর্থবছর সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তবে শর্ত থাকে, কোন লাইসেন্স অথবা পারমিট একাদিক্রমে ৩ (তিন) বৎসর নবায়ন না করা হলে তা পুনরায় নবায়নের যোগ্য হবে না। সুতরাং কেউ যদি মনে করে মদ কিনবো বা মদের লাইসেন্স করে মদ পান করবো তাহলে নিম্নে উল্লিখিত পদ্ধতিতে আবেদন জরুরী।
মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট আবেদন পদ্ধতি
লাইসেন্সের জন্য স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যালয়ে গিয়ে ফরম সংগ্রহপূর্বক মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ (যেমন: এন.আই.ডি কার্ড, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি ইত্যাদি) নির্ধারিত ফরমে পরিদর্শক বরাবর সংশ্লিষ্ট সার্কেলে আবেদন দাখিল করতে হবে।
আবেদন ফরমের সাথে আবেদনের ধরণ অনুযায়ী ফিস জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ট্রেজারি ঠিকানায় দেশী মদ পানের লাইসেন্স বা বিলাতি মদ পানের লাইসেন্সের জন্য আলাদা ফিস জমা দিতে হবে।
আবেদন নেওয়ার পর আবেদনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সার্কেল পরিদর্শক কর্তৃক তদন্ত করে মতামতসহ তিনি উপ-পরিচালক/সহকারী পরিচালক, উপ-আঞ্চলিক কার্যালয় বরাবর একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন।
এর পরের ধাপে উপ-পরিচালক/সহকারী পরিচালক কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে আপত্তি না থাকলে মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট প্রদানের অনুমোদন এবং সার্কেল পরিদর্শক কর্তৃক আবেদনকারীকে মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট প্রদান করা হবে।
সাধারণত আবেদনের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।
সুতরাং নির্ধারিত ফরমে চাহিদাকৃত তথ্য দিয়ে আবেদন করার কিছু দিনের মধ্যেই মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট পেতে পারেন।
মদ পানের লাইসেন্স ফিস
বর্তমানে দেশি মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট ফিস ৮০/= টাকা এবং বিলাতি বা বিদেশী মদের পারমিট ফিস ২০০০/= টাকার ট্রেজারি চালান দ্বারা প্রদান করতে হয়।
মদ পানের লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্যতা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ১৪ তে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ৩ (তিন) মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি লাভের পর ৫ (পাঁচ) বছর কাল অতিবাহিত না হয়ে থাকলে, অথবা ৫০০ (পাঁচশত) টাকার অধিক অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং দণ্ডের টাকা আদায় করার পর ৫ (পাঁচ) বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকলে এমন কোন ব্যক্তি লাইসেন্স অথবা পারমিট প্রাপ্তির যোগ্য হবেন না।
পাশাপাশি কোন লাইসেন্সধারী যদি লাইসেন্স অথবা পারমিটের কোন শর্ত ভঙ্গ করেন এবং সেজন্য তার উক্ত লাইসেন্স অথবা পারমিট বাতিল হবে।
মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট ব্যতিত মদ পানের শাস্তি
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে বলা হয়েছে লাইসেন্স বা পারমিট সংগ্রহ করে কেউ মদ পান করতে পারে। উপরে উল্লিখিত বিভিন্ন দফায় আমরা কিভাবে তা সংগ্রহ করতে পারি এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এই একই আইনের ১০ ধারার (১) উপধারার দফা (চ) অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি লাইসেন্স, পারমিট, পাস ব্যতিত কোন অ্যালকোহল সেবন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করতে পারবেন না।
যদি কেউ ব্যবহার করেন তাহলে এই আইনে ৩৬ ধারা অনুযায়ী তা হবে অপরাধ। এই ধারার সরণীর ক্রমিক নং ২৫ অনুযায়ী প্রথম তপশিলের ‘খ’ শ্রেণির ৩ নং ক্রমিকভুক্ত যে-কোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (চ) এর লঙ্ঘন করলে অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
সুতরাং মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিট ব্যতিত কেউ মদ পান করলে সর্বনিম্ন ২মাস থেক সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড হতে পারে।
আমাদের পরামর্শ
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, গবেষকেরা বলছেন, ১৫-৪৯ বছর বয়সী মানুষের ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটি ঘটে মদের কারণে। নিয়মিত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মদে অভ্যস্ত মানুষ সহিংস হয় এবং অনেক সময় নিজের ক্ষতি করে। তাছাড়া মদ পানের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন হয়।
সুতরাং চিকিৎসার প্রয়োজনে না হলে কিংবা অতিব প্রয়োজন না হলে মদ পানের লাইসেন্স বা পারমিটের জন্য আবেদন করবেন না। আরও বিস্তারিত সহযোগিতার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।