C-07, 6th floor, Annex Bar Building, Cox's Bazar Court, Bangladesh.

shipta@LegalHome.Org

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম

কিভাবে নতুন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করবেন সেটি নিয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। যারা নিজের শখের মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে চান আজকের লেখাটি তাদের জন্য। এই লেখাটি পড়ে শোরুম থেকে কেনা মোটরসাইকেল আপনি বি.আর.টি.এ থেকে নিজেই নিবন্ধন করতে পারবেন।

কেন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন জরুরী?

বাংলাদেশ সড়ক আইন ২০১৮ অনুযায়ী প্রত্যেক মোটরযান নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি নিবন্ধন ব্যতীত মোটরসাইকেল চালনা আইনত অপরাধ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর চতুর্থ অধ্যায়ে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি বা মোটরযান মালিক রেজিস্ট্রেশন সনদ ব্যতীত সড়ক, মহাসড়ক বা পাবলিক প্লেসে মোটরযান চালাইতে বা চালাইবার অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন না।

দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা মোটরযান মালিক কর্তৃপক্ষের নিকট নির্ধারিত ফরম ও পদ্ধতিতে, নির্ধারিত ফিস এবং ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য নির্ধারিত চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশনের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করিবেন।

তৃতীয়ত, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা মোটরযান মালিক রেজিস্ট্রেশন নম্বরপ্লেট সংযোজন ও প্রদর্শন ব্যতীত মোটরযান চালাইতে বা চালাইবার অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন না।

রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া মোটরসাইকেল চালালে শাস্তির বিষয়ে এই আইনের ৭২  ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৬ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৬ (ছয়) মাসের কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

তাহলে বুঝতেই পারছেন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত মোটরসাইকেল চালানো বর্তমান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ আইন অনুযায়ী অপরাধ। ঠিক এই কারণে আপনার ক্রয়কৃত নতুন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক।

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের প্রথম ধাপ

কোন শোরুম কিংবা ডিলার থেকে যখন নতুন মোটরসাইকেল কিনবেন সাথে সাথে আপনাকে একটি মানি রিসিট, এবং একটি ডেলিভারি চালান শোরুম থেকে দিবে। ডেলিভারী চালানে গাড়ির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকে।

প্রথমদিন এই দুইটি ডকুমেন্টস দিয়েই আপনাকে মোটরসাইকেল ডেলিভারি দেওয়া হবে। আপনি যখন শোরুম বা ডিলারকে আপনার মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন এর ফাইল রেডি করতে বলে আসবেন তখন তারা ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে একটি ফাইল প্রস্তুত করবে।

সে ফাইলে রেজিস্ট্রেশন এপ্লিকেশন ফর্ম, আপনার তথ্য, সেলস ইনভয়েজ, কর চালানপত্র, চালান ফরম, গেট পাস, প্যাকিং লিস্ট, শুল্ক রিসিট, অঙ্গীকারনামাসহ মোট প্রায় ২৫ পৃষ্টার একটি ফাইল দেওয়া হবে।

ফাইলটি পাওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে গাড়ির জন্য বি.আর.টি.এ কতৃপক্ষের নিকট টাকা জমা দেওয়া। অনলাইনে কিংবা ব্যাংকে গিয়ে আপনি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফিস জমা দিতে পারবেন। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাওয়া রীতিমত হয়রানীর ব্যাপার তাই কিভাবে অনলাইনে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফিস জমা দিবেন তা জানুন।

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফিস অনলাইনে জমার নিয়ম

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফিস অনলাইনে জমা দেওয়ার জন্য আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে টাইপ করুন বি.এস.পি ডট বি.আর.টি.এ ডট জি.ও.ভি গভ ডট বিডি ( https://bsp.brta.gov.bd/ )। এরপর নিবন্ধন অপশনে গিয়ে আপনার তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করে ফেলুন। আমার যেহেতু আগে থেকে একাউন্ট করা আছে সেহেতু আমি লগিন করে নিয়েছি।

লগিন করা পর বিভিন্ন সেবার ফি অপশনে যাবেন এরপর মোটর‍যান নিবন্ধন সংক্রান্ত ফিস অপশনে ক্লিক করুন।

এরপর যে ইন্টারফেস দেখতে পাবেন সেখান থেকে মোটরযানের ধরণে মোটরসাইকেল সিলেক্ট করে দিন। মোটরযানের শ্রেণীতে আপনার মোটরসাইকেল অনুযায়ী নির্বাচন করুন। ১৫০ সিসির জন্য লার্জ, ১২৫ সিসির জন্য মিডিয়াম ও এর নিচের সিসি মোটরসাইকেলের জন্য স্মল সিলেক্ট করুন। আমারটা যেহেতু ১২৫ সিসি তাই মিডিয়াম সিলেক্ট করেছি।

এরপর ইঞ্জিন নাম্বারের ঘরে নির্ভুলভাবে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন নাম্বার লিখুন। চ্যাসিস নাম্বারের ঘরে চ্যাসিস নাম্বার লিখুন। সিসির ঘরে মোটরসাইকেলের সিসি লিখুন, আসন সংখ্যা দুইটি, বোঝাই গাড়ির ওজন ও খালি গাড়ির ওজন শোরুম থেকে দেওয়া কাগজ দেখে সঠিকভাবে লিখুন।

রোড ট্যাক্স কিস্তির ঘরে ফার্স্ট ইনস্টলমেন্ট সিলেক্ট করবেন। ফার্স্ট ইনস্টলমেন্ট হলো দুই বছরের জন্য ট্যাক্সসহ রেজিষ্ট্রেশন। আর ফুল পেমেন্ট মানে দশ বছরের জন্য। উৎপাদন বছরের ঘরে আপনার গাড়ি উৎপাদনের বছর লিখুন, এটি শোরুম থেকে দেওয়া কাগজ দেখে লিখুন। হায়ার পারচেস ও নতুন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন জন্য মালিকানা পরিবর্তনের ঘরে নো সিলেক্ট করুন।

এরপরের অংশে যার নামে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করা হবে তার নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, মালিকানার ধরণ দিন। সবকিছু পূরণ করা হয়ে গেলে এগিয়ে যান বাটনে ক্লিক করুন।

আপনার প্রদত্ত সকল তথ্য প্রিভিউ দেখাবে। আবারো ভালোভাবে সব তথ্য নির্ভুল আছে কিনা যাচাই করে নিন। ভুল থাকলে আবারো সঠিকভাবে পূরণ করুন। ফার্স্ট ইনস্টলমেন্টে কোথায় কত টাকা দিতে হবে সে নিয়ে একটি ছক দেখানো হবে। সে ছকে দেখবেন, ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের জন্য দুই হাজার দুইশ ষাট টাকা, ইস্যু অব নিউ রেজিষ্ট্রেশন এর জন্য তিন হাজার নয়শ আটশট্টি, ডিজিটাল রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেটের জন্য পাঁশচো পঞ্চান্ন টাকা  দুই বছরের ট্যাক্স টোকেন বাবদ দুই হাজার তিনশ টাকা ও সর্বশেষ সাপ্লিমেন্টারী ডিউটি বাবদ দিতে হচ্ছে এক হাজার উনসত্তর টাকা।

সর্বমোট দুই বছরের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য দিতে হবে দশ হাজার একশত বায়ান্ন টাকা। এই টাকা অবশ্য সময়ে সময়ে সরকার পরিবর্তন করতে পারে।

সবকিছু ঠিক থাকলে ফি জমা দিন বাটনে ক্লিক করুন। এখানে মোবাইল নাম্বারের ঘরের পাশে টিকবক্সটি ক্লিক করে নাম্বার কনফার্ম করুন। আবারো অবশ্যই মোটরসাইকেলের চ্যাসিস নাম্বারটি চেক করে নিন। কারণ টাকাগুলো জমা হবে চ্যাসিস নাম্বারের বিপরীতে।

টাকা জমা দেওয়ার জন্য পেমেন্ট মেথড হিসেবে বিকাশ/রকেট/কার্ড সিলেক্ট করতে পারবেন। আপনারা অন্যান্য উপায়েও টাকা জমা দিতে পারেন। যোকোন মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে এরপর এগ্রি টার্মস এন্ড কন্ডিশন ক্লিক করে নিশ্চিত বাটনে ক্লিক করুন।

পেমেন্ট হয়ে গেলে ইউর পেমেন্ট ইজ সাকসেসফুল, প্লিজ ক্লিক হেয়ার টু গেট মানি রিসিটে ক্লিক করে মানি রিসিট ডাউনলোড করে নিন। মানি রিসিট এরকম পাঁচ পৃষ্টার দেখতে পাবেন।

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফিস দেওয়ার পরবর্তী ধাপ

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফিস জমা দিয়ে মানি রিসিট ডাউনলোড হয়ে গেলে প্রিন্ট করে শোরুম থেকে প্রদত্ত ফাইল নিয়ে আবারো চলে যান শোরুমে। শোরুমকে বলুন আপনার ফাইলটি বি.এস.পি করে দিতে। বি.এস.পি হলো বি.আর.টি.এর অনলাইন সেবা। যেখানে আপনার মোটরসাইকেলের তথ্য তারা আপডেট করে দেয়। বি.এস.পি করার পর আপনার ফাইলে একটি বি.এস.পি নাম্বার লিখে দিবে তারা। এখন মোটামুটিভাবে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আপনার ফাইল প্রস্তুত।

মোটরসাইকেলের ফাইটির সাথে আপনার তিনকপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি সংযুক্ত করুন, এরপর আপনার এন.আইডি কার্ড, বিদ্যুৎ বিলের কপি, মানি রিসিট সংযুক্ত করে নিন।

এবার ফাইল নিয়ে চলে যান আপনার সংশ্লিষ্ট বি.আর.টি.এ অফিসে। অফিসে গিয়ে মোটরযান পরিদর্শকে ফাইলটি জমা দিলে তিনি সরজমিনে এসে মোটরসাইকেলের চ্যাসিস নাম্বার কাগজের সাথে মিলিয়ে দেখবেন এবং সব নির্ভুল থাকলে ফাইলে সিগনেচার করবেন। তারপর ফাইলটি বি.আরটিএ অফিসে জমা দিয়ে দিন। জমা নেওয়ার পর আপনাকে একটি রিসিভ কপি দিবে যা মানি রিসিটের গ্রাহক কপিতে। সেখানে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদানের তারিখ দিয়ে দেওয়া হবে।

যদিও তিন-চারমাস পরে রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদানের তারিখ দেওয়া হয়, মূলত সপ্তাহের মধ্যেই একনোলেজমেন্ট স্লিপ আর ট্যাক্স টোকেন দিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্য দিয়ে আপনার মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন শেষ হলো।

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন পরবর্তী ধাপ

সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী আপনার মোটরসাইকেল নিবন্ধনপ্রাপ্ত। তবে রেজিষ্ট্রেশন পরেও বেশ কিছু কাজ থেকে যায়। প্রাথমিকভাবে প্রদত্ত একনোলেজমেন্ট স্লিপে আপনকে গাড়ির জন্য একটি নাম্বার প্রদান করা হবে কিন্তু তাৎক্ষণিক আপনার গাড়ির স্মার্ট কার্ড ও ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দিবে না।

রেজিষ্ট্রেশন পেপার পাওয়ার সপ্তাহখানেক পর রেজিষ্ট্রেশনের সময় প্রদত্ত মোবাইলে নাম্বারে তারা এস.এম.এসের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে যে, আপনার মোটরসাইকেলের স্মার্টকার্ডের জন্য ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে কোনদিন সংশ্লিষ্ট বি.আর.টি.এতে যেতে হবে।

নির্ধারিত দিনে আপনি আপনার এন.আই.ডি কার্ড, গাড়ি রেজিষ্ট্রেশনের কাগজপত্র নিয়ে চলে যাবেন তাদের কাছে। সেখানে মিনিটের মধ্যেই একজন কম্পিউটার অপারেটর আপনার ছবি তুলবে এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট নিবে।

শেষ কথা

সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে আপনি মাসখানেকের মধ্যে আবোরো আপনার প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে এস.এম.এস পাবেন কখন আপনার গাড়ির ডিজিটাল নাম্বার প্লেট ও ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়া হবে। নির্ধারিত দিনে গিয়ে আপনার নাম্বার প্লেট এবং কার্ড বুঝে নিন। এখন আপনার মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন।

More from the blog

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী হিসেবে আদালত প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট নয়।...

কিভাবে ফৌজদারী মামলার বিচার হয়?

ফৌজদারী শব্দটি একটি ফারসি শব্দ। মূলত ফৌজ হলো আরবি শব্দ আর দারী শব্দটি ফারসি। ফৌজদারী মামলা বলতে বুঝায় যেসব কাজ করা বা না করা...

ফৌজদারী আদালতের গঠন ও বিচারিক ক্ষমতা

ফৌজদারী আদালত বলতে যে আদালতে মানবসৃষ্ট অপরাধের বিচার হয় তাকে বুঝায়। আমাদের ফৌজদারী আইনের গঠনপ্রণালী অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধকে অনেকভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং অপরাধের...

তামাদি আইনের ২৮ ধারা, বিলুপ্ত হবে সম্পত্তির অধিকার

আমরা কম-বেশি সকলেই জানি ১২ বছর দখলে থাকলেই সম্পত্তিতে অধিকার সৃষ্টি হয়। তামাদি আইনের ২৮ ধারা মতে এডভার্স পজেশনের মাধ্যমে এই অধিকার বিলুপ্ত হয়।...

You cannot copy content of this page