র্যাবের পদবী ও কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। বিশেষ বাহিনী হিসেবে র্যাবকে গঠন করা হয়েছে। আজকের এই লেখায় র্যাবের পদবী, কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন নিয়ে ইতোমধ্যেই দেশ এবং আর্ন্তজাতিক মহলে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
Table of Contents
র্যাব কখন ও কিভাবে গঠন হয়?
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অস্থিতিশীল আইন শৃংখলা পরিস্থিতি রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে।
ক্রমান্বয়ে সভা-সমন্বয়, আলোচনা ও গবেষনার পর সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধানে বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সংক্ষেপে র্যাব ফোর্সেস নামে একটি এলিট ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জনসাধারণের সামনে আত্মপ্রকাশ করে।
জন্মের পরপরই এই ফোর্সের ব্যাটালিয়নসমূহ সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকে এবং স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে।
এর মাঝে প্রথম অপারেশনাল দায়িত্ব পায় ১৪ এপ্রিল ২০০৪ তারিখে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান-রমনা বটমুলে নিরাপত্তা বিধান করার জন্য । এরপর আবার র্যাব মূলত তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। গত ২১ জুন ২০০৪ থেকে র্যাব ফোর্সেস পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে।
র্যাবে কিভাবে নিয়োগ
বাংলাদেশ র্যাবে সরাসরি নিয়োগের কোন বিধান নেই। দেশের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের নিয়েই এই বাহিনী গঠিত হয়েছে। র্যাবে নিয়োগের জন্য অবশ্যই দেশের অন্যান্য বাহিনীর সদস্য হতে হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠিত হয়। মুফতি হান্নান, মোল্লা শামীম ও পিচ্ছি হান্নানের মতো ভয়ংকর অপরাধীদের ক্রসফায়ারের ঘটনার মধ্য দিয়ে আলোচনায় উঠে আসে এই বাহিনী।
র্যাবের পদবী ও র্যাংক
র্যাব বাহিনীর সর্বনিম্ন পদবীর নাম কনস্টেবল। যারা সেনাবাহিনীর সৈনিক, নৌ-বাহিনীর সি-ম্যান, বিমানবাহিনীর এয়ারম্যান তারা যখন র্যাব জয়েন করে তাদের পদবী হয় পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার। তাদের কাঁধে থাকা শোল্ডার ব্যাজ খালি থাকে।
দ্বিতীয় নাম্বারে আছে নায়েক। সাধারণত পুলিশ বাহিনীতে যারা নায়েক হিসেবে থাকেন তারা র্যাব জয়েন করলে তাদের পদের নাম হয় নায়েক। তাদের কাঁধে থাকে একটা লাল রিভন ও একটি স্টার হুইল।
এই বাহিনীর তৃতীয় পদের নাম এ.এস.আই বা এসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর। অন্যান্য বাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদমর্যাদার কেউ যখন রেবে জয়েন করে তাদের কাঁধে একটি লাল রিভন ও দুইটি হুইল স্টার থাকে।
চতুর্থ পদে এস.আই বা সাব ইন্সপেক্টর। তাদের কাঁধে একটি লাল রিভন ও তিনটি স্টার হুইল থাকে। অন্যান্য বাহিনীতে যারা সার্জেন্ট ও কর্পোরাল তারা র্যাবে এই পদমর্যাদায় যোগদান করেন।
এরপরেই আছে ডি.এ.ডি বা ডেপুটি এসিটেন্ট ডিরেক্টর পোস্ট যা পুলিশের ইন্সেপেক্টর পদবীর সম-মর্যাদার। সেনা, নৌ ও অন্যান্য বাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার, ওয়ারেন্ট অফিসার, পি.ও অফিসারেরা র্যাবে এই পদে পদায়ন হয়। তাঁদের কাঁধে একটি রানিং হুইল থাকে।
র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়নে এ.ডি বা এসিটেন্ট ডিরেক্টর পদ দেখা যায়। ক্যাপ্টেন, ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট পদমর্যদার অফিসারের র্যাবে এই পদে পদায়ন হয়ে থাকে যা পুলিশের এ.এস.পি পদমর্যদার। যাদের চাকরী জীবন সাাত বছরের মধ্যে তারা র্যাবে এই পদে পদায়ন হয়ে থাকে। এ.ডি পদমর্যদার অফিসারদের র্যাংক ব্যাজে তিনটি রানিং হুইল থাকে।
র্যাব বাহিনীতে সপ্তম পর্যায়ে আছে সিনিয়র এসিটেন্ট ডিরেক্টর পদ। অন্যান্য বাহিনীর ক্যাপ্টেন, ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট পদমর্যদার যাদের চাকরীর বয়স সাত বছরের বেশি হয়ে থাকে তাদেরকে র্যাবে এই পদে পদায়ন করা হয়। এই পদবীটি পুলিশের এডিশনাল এস.পি পদমর্যদার সমান। এই অফিসারদের কাঁধের র্যাংক ব্যাজে একটি মনুমেন্ট বা স্মৃতিস্তম্বের মতো থাকে।
র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়নের অষ্টম পর্যায়ে আছে ডি.ডি বা ডেপুটি ডিরেক্টরের পদ যা এই বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার বা টু-আইসি হিসেবেও পরিচিত। সেনাবাহিনীর মেজর, বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার ও নৌ-বাহিনীর ল্যাফটেনেন্ট কমান্ডার পদমর্যাদার অফিসারেরা র্যাবে এই পদে পদায়ন হয়ে থাকে। ডি.ডি পদটি পুলিশের এস.পি বা পুলিশ সুপার পদমর্যদার হয়ে থাকে। ডেপুটি ডিরেক্টর পদমর্যদার অফিসারদের র্যাংক ব্যাজে একটি রানিং হুইল এবং একটি মনুমেন্ট থাকে।
সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট কর্ণেল, বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ও নৌ-বাহিনীর কমান্ডার পদমর্যদাধারীরা র্যাবে পদায়ন হওয়ার সময় ডিরেক্টর বা সি.ও হিসেবে পদায়ন হয়। এই পদ পুলিশের এডিআইজি বা এডিশনাল ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যদার হয়ে থাকে। এইসব অফিসারদের র্যাংক ব্যাজে দুটি রানিং হুইল ও একটি মনুমেন্ট দেখা যাবে।
র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল। এই পদের অফিসারদের র্যাংক ব্যাজে তিনটি রানিং হুইল ও একটি মনুমেন্ট যুক্ত থাকে। র্যাবে এই পদটি পুলিশের ডি.আই.জি বা ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল সমমর্যদার। অন্যান্য বাহিনীর কর্ণেল, গ্রুপ ক্যাপ্টেন, ক্যাপ্টেন পদমর্যদার অফিসারের র্যাবে এই পদে জয়েন করে।
র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়নের প্রধান পদ হলো ডি.জি বা ডিরেক্টর জেনারেল। এই পদধারী ব্যক্তি র্যাব প্রধানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। পুলিশের আইজি, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বিমানবাহিনীর এয়ার কমোডর, ও নৌ-বাহিনীর কমোডর পদধারী অফিসারেরা সাধারণত র্যাব এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন। র্যাব প্রধানের রেংক ব্যাজে একটি ঢাল-তলোয়ার ও একটি মনুমেন্ট থাকে।
র্যাবের প্রধান দায়িত্বসমূহ
- অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দায়িত্ব।
- অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক এবং এ জাতীয় অন্যান্য বস্তু উদ্ধার।
- অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার।
- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা।
- সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
- সরকার নির্দেশিত যে কোন অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা।
- সরকার নির্দেশিত যে কোন জাতীয় দায়িত্ব পালন করা।
র্যাবের কাছে অভিযোগ করার নিয়ম
আপনার যদি একটি স্মার্ট ফোন থাকে তাহলে আপনি চাইলে র্যাবের কাছে সহজেই নানান বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন। র্যাবের কাছে অভিযোগ করার জন্য রিপোর্ট টু র্যাব নামে একটি মোবাইল এপস আছে। প্লে-স্টোর কিংবা এপ স্টোর থেকে এই এপটি ডাউনলোড করে এপের মাধ্যমে অভিযোগ করা যাবে।
অথবা আপনি চাইলে র্যাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার এলাকা অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডারের নাম্বারেও যোগাযোগ করে অপরাধের তথ্য দিতে পারেন।
কোন অপরাধ দমনে র্যাব কাজ করে
সন্ত্রাসী আক্রমণ নিয়ে আপনি চাইলে র্যাবকে তথ্য দিতে পারেন। দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস দমনে র্যাব কাজ করে থাকে। চাইলে কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের বিষয়েও আপনি তথ্য দিতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ সম্পর্কেও র্যাবকে তথ্য দিতে পারেন। অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচায় যদি কেউ বা কোন গ্রুপ প্রতারণা করে থাকে তাহলে র্যাব সে বিষয়ে কাজ করে থাকে।
অপহরণ বিষয়ে র্যাব খুবই জোরালো ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনার কোন নিকট আত্মীয় যদি অপহরণ হয় তাহলো আপনার সংশ্লিষ্ট র্যাব কোম্পানি কমান্ডার বা এপের মাধ্যেমে র্যাবকে তথ্য দিতে পারেন।
কোন নিখোঁজ ব্যক্তি সম্পর্কে যদি অনুসন্ধান করতে চান তাহলেও র্যাবকে তথ্য দিতে পারেন। কিংবা নিখোঁজ কোন ব্যক্তির সন্ধান পেলেও র্যাবকে জানাতে পারেন।
খুন বা হত্যার তথ্য দিয়েও র্যাবকে সহযোগিতা করতে পারেন। এবিষয়ে আসামী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটকের জন্য র্যাব যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে।
ডাকাতি ও মাদকের বিষয়েও র্যাবের ভূমিকা দেখা যায়। ডাকাতি বা মাদক সম্পর্কে যদি কোন তথ্য থাকে তাহলে র্যাবকে জানাতে পারেন।
সাধারণত উপরে উল্লেখিত এসব অপরাধ ছাড়া র্যাব অন্যান্য সাধারণ অপরাধ নিয়ে তেমন একটা কাজ করে না। তবে অন্যান্য বাহিনীকে বিভিন্নরকম সহযোগিতা করার জন্য র্যাবের রয়েছে একাধিক উইং বা সেল।
শেষাংশ
র্যাব ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সফলমূলক কাজ করে গেছে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে এই বাহিনী নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন। সম্প্রতি র্যাবের বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্ছার হয়েছে এ বিষয়ে। র্যাবকে একটি সুন্দর বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছে।