বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধন করার সম্পূর্ণ নিয়ম

পাঠাগার একটি দেশের জ্ঞানের তীর্থভূমি। যারা বিভিন্ন গ্রামে বা শহরে বেসরকারী পাঠাগার গড়ে তুলেছেন চাইলে আপনারা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আপনাদের পাঠাগারটিকে সরকারি নিবন্ধনের অন্তভূক্ত করতে পারেন।

আজকের এই লেখায় কিভাবে আপনাদের বেসরকারী পাঠাগার সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনবেন এবং নিবন্ধন করলে কি কি সুযোগ সুবিধা পাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি এই লেখার মাধ্যমে আপনারা যারা পাঠাগার সংগঠক এবং বইয়ের ফেরীওয়ালা তারা উপকৃত হবেন।

বেসরকারী পাঠাগার কি?

বেসরকারী পাঠাগার বলতে আমরা বুঝি যে-সমস্ত পাঠাগার ব্যক্তি উদ্যেগে বা সামাজিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে। সেচ্ছাউদ্যেগে যদি কোন এলাকার কোন ব্যক্তি বা সংগঠন গণউন্নয়নে কোন বই পড়ার এবং পড়ানোর উদ্যেগ গ্রহণ করে তখনই সেটা বেসরকারি পাঠাগারের আওতাভুক্ত হয়।

বেসরকারী পাঠাগার মূলত তিন প্রকার হয়ে থাকে। প্রথমত ব্যক্তিগত পাঠাগার, দ্বিতীয়ত গণ-গ্রন্থাগার ও তৃতীয়ত প্রাতিষ্টানিক পাঠাগার। মূলত গণ-গ্রন্থাগারকে সরকারি নিবন্ধন প্রদান করা হয়। তাছাড়া সরকারি নিবন্ধনের জন্য কি কি প্রয়োজন তা আমরা পরে আরও বিস্তারিত জানবো।

আলোচনার শুরুতে বলে রাখা ভালো যে, বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, এনজিও পরিচালিত বেসরকারী গ্রন্থাগারগুলোকে সরকারীভাবে বেসরকারী গ্রন্থাগার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়না।

সুতরাং, যেসমস্ত বেসরকারী পাঠাগার এসবের আওতাভুক্ত তারা চাইলেও সরকারী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অথবা আবেদন করলেও সরজমিনে পরিদর্শনে আসলে সে আবেদন বাতিল করে দেওয়া হবে।

বেসরকারী গ্রন্থাগার বিকাশের ইতিহাস

উইকিপিডিয়ায় দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, উনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে বাংলাদেশের বেশীরভাগ গ্রন্থাগার ছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং বিত্তবানদের দখলে। গ্রন্থাগারিক ও অন্যান্য উৎসাহী নাগরিকদের বহু বছরের চেষ্টায় গ্রন্থাগারের এই সংকীর্ণতাকে মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন করে এর বিস্তৃত ও অপরিহার্য সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে।

১৭৭৮ সালে চার্লস উইলকিন্সের বাংলা হরফ নির্মাণ এবং ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির পত্তন বাংলাদেশের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সূচনা করে বলে জানা যায়। কিন্তু তখনো বাংলাদেশে গ্রন্থাগার আন্দোলন জোরালোভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি।

মূলত ১৮৫৪ সালে বাংলাদেশের প্রাচীনতম চারটি গ্রন্থাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে এদেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনের গোড়াপত্তন হয় বলে ধারণা করা হয়। এই চারটি গ্রন্থাগার হলো ১.উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরি, বগুড়া। ২. যশোর পাবলিক লাইব্রেরি, যশোর। ৩. বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি, বরিশাল। ৪. রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি, রংপুর। ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন গণগ্রন্থাগার হিসাবে ‘নথব্রুক হল’ লাইব্রেরির কথা উল্লেখ করা যায়।

গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এই প্রচারণায় বগুড়া, যশোরের ন্যায় অন্যান্য স্থানেও পরিলক্ষিত হয়। উক্ত গ্রন্থাগারগুলি প্রধানত এক বা একাধিক জন হিতৈষী ব্যক্তির উদ্যোগ, জনসাধারনের চাঁদা, স্থানীয় জমিদারের সামান্য অর্থ সাহায্য এবং কিছুটা সরকারী অনুদানের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু তাতে শীঘ্রই ভাটা পড়তে থাকে।

ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে পড়ুন

ফলে এইসব গ্রন্থাগারগুলি সম্পূর্ণরুপেই এক প্রকার অসামঞ্জস্যপূর্ণ, স্বেচ্ছাসেবামূলক ও ব্যক্তি বিশেষের উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। আর তাই প্রতিষ্ঠার প্রায় শতবর্ষপর দেশবিভাগের পরে বাংলাদেশ যখন এই গ্রন্থাগারগুলি উওরাধিকারসূত্রে লাভ করলো তখন এদের অবস্থা খুবই শোচনীয়।

সূত্র বলছে বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মোট ১৯৫৬ টি বেসরকারী গণ-গ্রন্থাগার ( ঢাকা মহানগর ১০৩ টি, ঢাকা বিভাগ ৪৫৭টি, চট্রগ্রাম বিভাগ ৩১৯টি , খুলনা বিভাগ ৩০৪টি , রাজশাহী বিভাগ ২৮১টি , ররিশাল বিভাগ ২১২টি ,রংপুর বিভাগ ২২৭টি, সিলেট বিভাগ ৫৩ টি) যেগুলো বেশিরভাগই সন্তোষজনক অবস্থায় নেই।

অধিকাংশ বেসরকারী গণগ্রন্থাগারের ভবন পুরাতন, নেই পেশাগত গ্রন্থাগারিক, রয়েছে আর্থিক দৈন্যতা, পর্যাপ্ত বইপত্র, আসবাবপত্র এর অভাবতো রয়েছে। সম্পদ সীমাবদ্ধ হওয়ার কারনে সেবাও সীমিত হয়েছে ফলে আগত পাঠক, ব্যবহারকারীগণ তাদের কাঙ্ক্ষতি মানের সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

পাঠাগার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ

দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা বেসরকারি পাঠাগারগুলোকে নিবন্ধন প্রদান করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণ-গ্রন্থাগার অধিদপ্তর। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা পর্যায়ে গণ-গ্রন্থাগারের অধীন জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগার আছে।

জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক নিজ জেলার বেসরকারি পাঠাগারগুলোর তথ্য নিয়ে এবং মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাচাই করে নিবন্ধন প্রদান করে থাকেন।

নিবন্ধন প্রদান করা হলে একটি সরকারি সিলমোহরযুক্ত নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি নিবন্ধন সনদের পেঁছনে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। পাঠাগার নিবন্ধন সনদে জেলা সরকারি গণ-গ্রন্থাগারিতের সিল ও স্বাক্ষর থাকে।

নিবন্ধন সনদে একটি পাঠাগার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার প্রদান করা হয়। কত তারিখ নিবন্ধন প্রদান করা হলো সে-বিষয়েও বিস্তারিত উল্লেখ থাকে।

বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধনের উপকারীতা

আমরা যারা গ্রাম বা শহর পর্যায়ে বেসরকারী গণ পাঠাগার গড়ে তুলেছি একমাত্র তারাই জানি একটি বেসরকারী গণ পাঠাগার পরিচালনা করতে প্রতি মাসে কি পরিমাণে পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে।

এখানে হয়তো অর্থ ব্যায়ের সংখ্যাটা খুবই কম। কিন্তু প্রতি মাসে পাঠাগারে বিভিন্ন অনুষ্টান ও আনুষাঙ্গিক খরচ ঠিকই একটি পর্যায়ে চলে যায়। এতো ত্যাগ ও তিতিক্ষার পরে যদি সরকারী একটি স্বীকৃতি পাওয়া যায় তাহলে একধরণের তৃপ্তি কাজ করে।

তৃপ্তি শেষ কথা নয়। বেসরকারী পাঠাগার হিসেবে নিবন্ধন পেলে সমাজের যারা শিক্ষামূলক কাজে সহযোগিতা করতে চান তাদের মধ্যেও একধরণের পাঠাগার সম্পর্কে বিশ্বাস জন্মায়। যার দরুণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠাগারের জন্য নানা ব্যক্তি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

এখানেই শেষ নয়। আপনি যখন বেসরকারি পাঠাগার হিসেবে সরকারী নিবন্ধন পাবেন এরপর থেকেই আপনার পাঠাগারের নাম সরকারের সংশিষ্ট দপ্তরে জমা হয়।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নিবন্ধনপ্রাপ্ত সরকারী পাঠাগারগুলোকে অনুদান দিয়ে থাকে। অনুদানের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রতি বছর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনুদান ফরম প্রকাশ করা হয়।

সে অনুদান ফরম যথাযথভাবে পূরণপূর্বক এবং চাহিদাকৃত কাগজপত্র দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠাতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে যাচাই-বাচাই করে মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান প্রদান করা হয়। বর্তমানে অনলাইনে অনুদানের জন্য আবেদনের ব্যবস্থা দেখা যায়।

উল্লেখ্য যে, মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে বেসরকারী পাঠাগারগুলোকে অনুদান প্রদান করা হয়। ক,খ,গ শ্রেণীতে পাঠাগারগুলোকে অনুদান প্রদান করা হয়। অনুদানের মোট টাকার ৫০শতাংশ পাঠাগারের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয় এবং মোট টাকার ৫০ শতাংশ সমমূল্যের বই  প্রদান করা হয়।

অনুদানের বিষয়ে আরও বিস্তারিত অন্যকোন সময় বলবো। আজকে যেহেতু মূলত বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধন নিয়ে কথা বলছি চলুন পাঠাগার নিবন্ধন করতে কি প্রয়োজন তা দেখে নেওয়া যাক।

বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধন করতে কি প্রয়োজন (চেকলিস্ট)

বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধন করতে অনেকগুলো কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। খুবই সতর্কতার সাথে এই চেকলিস্টটি পড়ুন এবং সে অনুযায়ী আপনাদের পাঠাগারের কাগজপত্র দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করুন।

নিম্নলিখিত শর্তসাপেক্ষে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ আবেদন করবেন

১. পাঠাগারের নাম (পূর্ণ নাম উল্লেখ করতে হবে এবং সংক্ষিপ্ত নাম বর্জনীয়)।

২. পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাকাল ও তারিখ ।

৩. পাঠাগারের পূর্ণাঙ্গ একটি ঠিকানা।

৪. নিজস্ব জায়গা ও ভবন/বাড়ীর দলিল (নিজস্ব না হলে বিধি মোতাবেক ভাড়ার চুক্তিপত্র)। পাঠাগারের চুক্তিপত্রের নমুনা দেখুন।

৫. পাঠাগারের একটি গঠনতন্ত্র। গঠনতন্ত্রের নমুনা দেখুন।

৬. একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী পরিষদ (নাম, ঠিকানা, পেশা, বয়স স্বাক্ষরসহ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভার কার্যবিবরণী)। কার্যকরী পরিষদের নমুনা দেখুন এখানে।

৭. সাধারণ পরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদ (নাম, ঠিকানা, পেশা, বয়স স্বাক্ষরসহ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভার কার্যবিবরণী)। কার্যকরী পরিষদের মতোই।

৮. পাঠাগারের মোট বইয়ের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০০ (পাঁচশত)টি। বইয়ের তালিকা কিভাবে করবেন নমুনা দেখুন।

৯. পত্রিকা/সাময়িকীর সংখ্যা (জাতীয় দৈনিক কমপক্ষে ১টি)।

১০. পাঠাগারের সময় ও সপ্তাহে কতদিন খোলা থাকে তার তথ্য।

১১. পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা (নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বরসহ তালিকা) (কমপক্ষে ১০০জন)। পাঠকসদ্যের তালিকার নমুনা দেখুন।

১২. পাঠাগারের আসন সংখ্যার তথ্য।

১৩. কর্মচারীর সংখ্যা।

১৪. পাঠাগারের বর্তমান আয়ের উৎস।

১৫. পাঠাগারের নামে একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট। ব্যাংক একাউন্ট অবশ্যই পাঠাগার যে উপজেলায় অবস্থিত সে এলাকার যেকোন ব্যাংকে হতে হবে। পাশাপাশি পাঠাগারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের নামে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট হতে হবে।

১৬. পাঠকসেবা সম্পর্কিত কোন অনুষ্ঠান/প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠানের তথ্য। নমুনা দেখুন।

১৭. প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য পাঠাগার কর্তৃপক্ষের মোবাইল ফোনসহ নাম, ঠিকানা ও পদবী।

মূলত একটি বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধনের জন্য উপরিউক্ত তথ্যগুলো দিতে হবে। নিম্নে কিভাবে পাঠাগার নিবন্ধনের ফর্মটি পূরণ করবেন তা হাতে-কলমে দেখানো হয়েছে। আরও বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন।

পাঠাগার নিবন্ধনের ফরম পূরণ পদ্ধতি

বর্তমানে অনলাইনেও পাঠাগার নিবন্ধনের জন্য ব্যবস্থা দেখা যায় কিন্তু এই অনলাইনে পাঠাগার নিবন্ধনের আবেদন কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা জানা যায়নি। তারপরেও অনলাইনে পাঠাগার নিবন্ধনের জন্য এই ফর্মটি পূরণ করে দিতে পারেন।

এখন আসি স্বাভাবিকভাবে সরাসরি কিভাবে পাঠাগার নিবন্ধনের আবেদন ফরম পূরণ করবেন সে বিষয়ে।

প্রথমেই গণ-গ্রন্থাগারের ওয়েবসাইটের এই লিংক থেকে বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধনের ফরমটি ডাউনলোড করে নিন অথবা সরাসরি আপনার জেলা সরকারী গণ-গ্রন্থাগারে গিয়ে নিবন্ধন ফর্ম সংগ্রহ করে নিন।

ফর্ম সংগ্রহ করার পর ফর্মে উল্লেখিত গ্রন্থাগারের নাম ও ঠিকানা লেখার জায়গায় সঠিকভাবে আপনাদের পাঠাগারের সঠিক নাম ও বিস্তারিত ঠিকানা লিখুন। পাঠাগারের নাম লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন মূল নামের শেষে যেন পাঠাগার বা গ্রন্থাগার শব্দটি থাকে। (যেমন: জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার, জ্ঞানান্বেষণ গণ-গ্রন্থাগার।)

ফর্মের দুই নাম্বার সেকশনে আপনাদের পাঠাগারটি কবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তার দিন, মাস ও বছর লিখুন। (যেমন: ১৫/০৪/২০১৭খ্রি:)

তৃতীয়ত ফর্মে চাওয়া হয়েছে পাঠাগারের কার্যক্রম কোথায় পরিচালিত হয় সে বিষয়ে তথ্য। যদি আপনাদের পাঠাগার এখনো ভাড়া কোন ঘরে বা অস্থায়ী কোন জায়গায় পরিচালিত হয় সেক্ষেত্রে ভাড়ায় পরিচালিত লিখুন। আর যদি পাঠাগারের নিজস্ব কোন জায়গা থাকে তাহলে সে জায়গার দলিল বা প্রমাণক কাগজপত্রের একটি ফটোকপি সংযুক্ত করুন।

চতুর্থত, নিজস্ব ঘর না থাকলে পাঠাগার কোথায় পরিচালিত হয় তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই ঘরে বর্তমানে পাঠাগার ভাড়া দোকান ঘর বা অন্যকোথাও হয়ে থাকলে লিখুন। পাশাপাশি ভাড়া করে পাঠাগারের ঘর নেওয়ার সময় ঘর মালিকের সাথে ৩০০টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি ঘর ভাড়ার চুক্তিনামা তৈরি করুন। এবং এই চুক্তিনামার একটি ফটোকপি এখানে সংযুক্ত করে দিন।

ফর্মের পাঁচ নাম্বার সেকশনে বর্তমানে পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা কত তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই জায়গায় আপনাদের পাঠাগারে সর্বমোট কতটি বই আছে তা লিখুন। পাশাপাশি আপনাদের পাঠাগারের বইয়ের তালিকাটি ফটোকপি করে অথবা টাইপ করা থাকলে তার একটি কপি আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করে দিন।

এবার এর পরের সেকেশনে বলা হয়েছে, গ্রন্থাগারে নিয়মিত কোন পত্রিকাগুলো রাখা হয় সে তথ্য। আপনাদের পাঠাগারে সচরাচর দৈনিক কি কি পত্রিকা রাখা হয় তা এই ঘরে লিখুন। তবে খেয়াল রাখবেন এই তালিকায় অবশ্যই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার নাম যাতে থাকে।

ফর্মের সাত নাম্বারে আপনাদের পাঠাগারে দৈনিক কতজন পাঠক বা ব্যবহারকারী উপস্থিত থাকে সে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনারা একটি রেজিষ্ট্রার তৈরি করে নিতে পারেন। দৈনিক যারা পাঠাগারে আসবে এবং পাঠাগার থেকে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করবে তা উক্ত রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ থাকবে। সুতরাং আপনাদের পাঠাগারে দৈনিক উপস্থিতির রেজিষ্ট্রারের এক দিনের ফটোকপি আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করে দিন এবং এই ঘরে দৈনিক কতজন উপস্থিত থাকে তা লিখুন। চেষ্টা করবেন দৈনিক যাতে বিশজন পাঠকের উপস্থিতি থাকে।

আট নাম্বারে পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেন তিনি কি খন্ডখালীন নাকি সার্বক্ষণিক অথবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিনা সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এই ঘরে আপনাদের নিজস্ব গ্রন্থাগারিকের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ঠিক মার্ক দিয়ে দিন। যদি গ্রন্থাগারিক নিয়োগের বা সম্মানী প্রদানের কাগজপত্র থেকে থাকে তাহলে আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করে দিন।

পাশাপাশি নয় নাম্বারে গ্রন্থাগারিক হিসেবে যিনি বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন তার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সম্মানী লিখে দিন।

বেসরকারী গ্রন্থাগার হিসেবে নিবন্ধনের  দশম ঘরে পাঠাগারের গঠনতন্ত্র আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই ঘরের পাশে হ্যাঁ লিখুন এবং পাশে ব্রাকেটে কপি সংযুক্ত লিখে দিন। গঠনতন্ত্র সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন ধারণা না থাকে সেক্ষেত্রে কিভাবে পাঠাগারের গঠনতন্ত্র তৈরি করবেন তা উপরের একটি লিংকে গঠনতন্ত্রের একটি নমুনা কপি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

এগারো নাম্বার ক্রমিকে এর আগে সরকারী কোন অনুদান পেয়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে। আপনাদের পাঠাগার সরকারী নিবন্ধন না হলে সরকারী অনুদান কখনোই পাবেন না। সেহেতু এই ঘরে প্রযোজ্য নয় লিখুন।

বারো নাম্বার ক্রমিকে পাঠাগারের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এই ঘরে আপনাদের পাঠাগারের অর্থ বা বই কিভাবে সংগ্রহ করেন তার তথ্য দিয়ে দিন। (যেমন: (ক) সদস্য চাঁদা, (খ) শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান। (গ) গণচাঁদা। ইত্যাদি।)

এরপর পাঠাগারের কোন রেজিষ্ট্রেন আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকেও অনেকে ক্লাবের নামে নিবন্ধন গ্রহণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আর নিবন্ধন দেওয়া হয় না। সুতরাং নিবন্ধন না থাকলে না লিখুন।

প্রায় শেষ হলো আপনার পাঠাগারের সরকারী তালিকাভুক্তি আবেদনের ফর্ম পূরণ। এবার ক্রমিক তেরো এবং চৌদ্দতে পাঠাগারের কার্যকরী কমিটির তালিকার সংযুক্তি দিতে বলা হয়েছে এবং গ্রন্থাগারে মোট সদস্য সংখ্যা কত জানতে চাওয়া হয়েছে। এই ঘরে পাঠাগারের সদস্য সংখ্য লিখুন এবং সদস্যদের তালিকার একটি ফটোকপি সংযুক্ত করে দিন।

ফর্মের একদম নিচে ডানপাশে থাকা ঘরে তথ্য প্রদানকারীর নামে পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা বা কমিটির অন্য সদস্যের নাম লিখুন। পাশাপাশি পাঠাগারে তার পদবী কি তা লিখুন এবং ঠিকানা ও একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখুন।

বেসরকারী পাঠাগার নিবন্ধন ফর্মটি পূরণ শেষ হলে আবারো পূনরায় ভালোভাবে সকল তথ্য যাচাই করুন। কোন ভূল বা কাটাকাটি হলে নতুনভাবে ফর্ম পূরণ করুন।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার ফর্মটি এবং সকল প্রকার সংযুক্তি পিন করে লাগিয়ে নিয়ে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা উপজেলা চেয়ারম্যান অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/ইউ.এন.ওর কাছে যান।

ফর্মের একদম নিচে বামপাশে থাকা ঘরটিতে সংশ্লিষ্ট যেকারো একটি স্বাক্ষর এবং সিল দিয়ে নিন। এবার শেষ হলো আপনার ফর্ম পূরণ। আবারো সবকিছু পুনঃযাচাই করে আপনার সংশ্লিষ্ট জেলা সরকারী গণ-গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিকের কাছে ফরমটিসহ সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে আসুন। পাশাপাশি সরাসরি কথা বলে আরকোন কাগজপত্র তারা চায় কিনা জানুন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করে জমা দিন।

ফর্ম জমা নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই জেলা সরকারী গণ-গ্রন্থাগারিক বা গণ-গ্রন্থাগারের যেকোন কর্মকর্তা আপনাদের পূর্ব নোটিশে স্ব-শরীরে পাঠাগার তদন্তে আসবেন। সকল তথ্য সঠিক থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সন্তোষজনক মনে করলে পাঠাগারের নামে রেজিষ্ট্রেশন সনদপত্র ইস্যু করবেন।

আমাদের পরামর্শ

আমরা যারা গ্রাম ও শহর পর্যায়ে গণ-গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছি কিংবা পাঠাগারকর্মী তারা কখনোই কোন অনুদান বা সহায়তা কখন দিবে সে আশায় বসে থাকি না। সামাজিক গুরুদায়িত্ব হিসেবে প্রতিদিনই পাঠাগারের কাজ করে যাই।

আমাদের একেকটি পাঠাগার আমাদের কাছে আত্মার-আত্মীয়। দেশে এমনও নজির আছে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং পরিচালনার জন্য চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরেছেন এবং কৃষিকাজ করছেন। পাঠাগার পরিচালনা করতে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন না হলেও যে অর্থের প্রয়োজন তার অর্ধেক হলেও দেশের সরকারের বহন করা উচিৎ।

কেননা একটি দেশের জাতি ও সমাজ সভ্য ও সুন্দর হয় পাঠাগারের মাধ্যমেই। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শিকড়ে পৌঁছাতে পারে কেবল একটি পাঠাগারে প্রবেশের মাধ্যমেই।

সুতরাং, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার যেহেতু দেশের বেসরকারী পাঠাগারগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে অল্পকিছু অনুদান ও বই প্রতিবছর দিচ্ছে আমরা মনে করি এটাও একটি ভালো উদ্যেগ। আপনারা যারা ব্যক্তি পর্যায়ে বেসরকারী পাঠাগার পরিচালনা করছেন প্রত্যেকে নিবন্ধন করে সমাজপ্রগতির এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করুন।

কোন প্রশ্ন বা অভিযোগ থাকলে কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ।

অ্যাডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া
অ্যাডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া
শিপ্ত বড়ুয়া কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এলএল.বি(অনার্স) ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এলএল.এম সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অ্যাডভোকেট ও লিগ্যাল হোমে আইন পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। অনলাইনে আইনী পরামর্শ প্রদান ও সরাসরি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি।

7 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য
আপনার নাম

আরও লেখা

যেভাবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন

আইন পাশ করার পর একজন শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দের জায়গায় থাকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষা। দিন যত...

ফৌজদারী মামলায় জামিন যেভাবে পাওয়া যাবে

কোন ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়া আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার। কোন ফৌজদারী মামলায় জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে মনে...

সমাজসেবা অধিদপ্তরে সংস্থা/সংগঠন নিবন্ধনের নিয়ম

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠন বা সংস্থাসমূহকে সরকারি নিবন্ধন দেওয়ার কাজ সমাজসেবা অধিদপ্তরের। আজকের লেখায় সংগঠন নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে...

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী...

You cannot copy content of this page