শুক্রবার, মার্চ ২২, ২০২৪

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন যেভাবে

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কি বা কেন করবেন জানেন কি? বর্তমান সময়ে আপনার যদি একটি মোটরসাইকেল কিংবা একটি গাড়ি থাকে তাহলে সেটি চালানোর জন্য স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করা অতি আবশ্যক। পাশাপাশি মোটসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন থাকাও জরুরী। লাইসেন্স ছাড়া আপনি যানবাহন চালাতে গেলেই পড়তে পারেন বিপদে। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স অতি আবশ্যক একটি দলিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন তা জানতে আজকের আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কি?

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুততর করার প্রয়াসে ডিজিটালভাবে একটি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে যেখানে আপনার দশ আঙ্গুলের ছাপ, ত্রিকোণ ছবি ও যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে। গাড়ি চালানোর সময় ট্রাফিক পুলিশ যাতে সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করতে পারে এবং চালকের নিকট অতিরিক্ত তথ্য চাইতে না হয় সেজন্যই মূলত স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করা। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ হতে হয়। অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে। মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

স্মার্ট কার্ড
ছবি: স্মার্ট কার্ড নমুনা।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করার পর সেখানে উল্লিখিত পরীক্ষার দিনে লিখিত, মৌখিক ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই আপনি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আপনাদের সুবিধার্থে বলে রাখা ভালো যে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর দশ থেকে পনেরো দিন পর পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়া হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ?

পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০কেজি-এর নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। দ্বিতৃয়ত, পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহারে বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর হতে হবে।

পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশী) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে ৩০ বছর হতে হবে।

বি:দ্র: পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীকে প্রথমে হালাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে এবং এর ন্যূনতম তিন বছর পর তিনি পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কমপক্ষে ০৩ (তিন) বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফিস জমা

স্মার্ট কার্ডের জন্য নির্ধারিত ফিস যা পেশাদারের ক্ষেত্রে- ১৪৩৮/-টাকা ও অপেশাদারের ক্ষেত্রে- ২৩০০/-টাকা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ সংযুক্ত করতে হয়।

আপনি চাইলে অনলাইনেও ফিস জমা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ডের ফিস অনলাইনে জমা দিতে প্রথমে বি.এস.পি সার্ভিস পোর্টালে লগিন করুন। লগিন করার পর সাইডবার থেকে বিভিন্ন সেবার ফি তে ক্লিক করে লাইসেন্স সংক্রান্ত ফিস অপশনে ক্লিক করে আপনার সংশ্লিষ্ট বি.আর.টি.এ অফিস সিলেক্ট করুন, এরপর সঠিকভাবে আপনার নাম, বাবার নাম লিখে নিশ্চিত বাটনে ক্লিক করুন।

এরপর প্লাটিক কার্ড প্রফেশনাল অথবা নন-প্রফেশনালে ক্লিক করে আপনার কাঙ্কিত পেমেন্ট মেথড সিলেক্ট করে পেমেন্ট করে দিন। পেমেন্টের পর টাকা জমা দানের রশিদটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন প্রক্রিয়া

বি.আর.টি.এ প্রদত্ত নির্ধারিত ফর্মে যথাযথভাবে তথ্য প্রদানপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট, ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি, সত্যায়িত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন ও সর্বশেষ সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দিতে হবে। এসব ডকুমেন্টস রেডি করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।

ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ডের বায়োমেট্রিক্স তথ্য প্রদান

সব কাগজপত্র জমাদানের পর দুই-তিনদিন পর অফিসে গিয়ে আপনার বায়োমেট্রিক্স তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন, ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণপূর্বক আপনাকে একটি অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এই অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েই আপনি উল্লেখিত যানবাহন চালাতে পারবেন। এরপর এই অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের মাসখানেকের মধ্যে আপনার স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হবে। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে।

অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স আইন

মোটর ভেহিকেল রুলস

মোটর ভেহিকেল রুলস, ১৯৮৪ এর ধারা ১৭ এর উপধারা ১ অনুযায়ী এই অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট বি.আর.টি.এ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে থাকে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাময়িক ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে পারে যা দিয়ে গ্রাহক আবেদিত গাড়ি চালাতে পারবেন।

আর্টিকেলটি না পড়লে হচ্ছে না হলে ভিডিও দেখে নিন

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে চাইলে

(ক) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স:

গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফিস (মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২৪২৭/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।

আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে একইদিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হবে। স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

(খ) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স:

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফিস (মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১৫৬৫/- টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ২৩০/- টাকা জরিমানাসহ) জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএর নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।

গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য গ্রাহককে নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হবে। স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং এর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

আমাদের পরামর্শ

অনেকের ধারণা দালাল ছাড়া স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করা সম্ভব নয়। আপনি নিজে নিজেই সকল প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করুন, তাহলে দালাল ছাড়াই আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন।

আশা করছি লিগ্যাল হোমের এই পর্বে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে মন্তব্য করে জাননোর অনুরোধ রইলো। লিগ্যাল হোমের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

অ্যাডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া
অ্যাডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া
শিপ্ত বড়ুয়া কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এলএল.বি(অনার্স) ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এলএল.এম সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অ্যাডভোকেট ও লিগ্যাল হোমে আইন পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। অনলাইনে আইনী পরামর্শ প্রদান ও সরাসরি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি।

3 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য
আপনার নাম

আরও লেখা

যেভাবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন

আইন পাশ করার পর একজন শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দের জায়গায় থাকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভূক্তি পরীক্ষা। দিন যত...

ফৌজদারী মামলায় জামিন যেভাবে পাওয়া যাবে

কোন ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়া আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার। কোন ফৌজদারী মামলায় জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে মনে...

সমাজসেবা অধিদপ্তরে সংস্থা/সংগঠন নিবন্ধনের নিয়ম

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংগঠন বা সংস্থাসমূহকে সরকারি নিবন্ধন দেওয়ার কাজ সমাজসেবা অধিদপ্তরের। আজকের লেখায় সংগঠন নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে...

ফৌজদারী মামলায় আপিল করবেন যেভাবে

ফৌজদারী মামলায় আপিল সম্পর্কে আইনে সুর্নিদিষ্ট বিধান আছে। ধরুন ফৌজদারী মামলায় একটি রায় হলো, আপনি বাদী কিংবা বিবাদী...

You cannot copy content of this page